প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
প্রচারের ঢক্কানিনাদের তুলনায় খরচ বাড়ছে সামান্যই। প্রথমে ঠিক ছিল, লোকসভা নির্বাচনের আগে এক বছর বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে। এ বার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ছত্তীসগঢ়ে প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’য় আগামী পাঁচ বছর ধরে ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে। তা নিয়ে হইহই করে বিজেপি নেতারা ভোটমুখী ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলঙ্গানায় প্রচারে নেমে পড়েছেন। এ নিয়ে বিজেপির প্রচারের শব্দ জোরালো হলেও কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের খরচ তেমন বাড়ছে না।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, আগামী বছর বাজেটে মাত্র ৭ শতাংশ বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করতে হবে খাদ্য ভর্তুকিতে। তা সত্ত্বেও কোভিডকালে খাদ্য ভর্তুকিতে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছিল, তার তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ কম খরচ হবে। কারণ, কোভিডের পরে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’য় যে বাড়তি রেশন দেওয়া হচ্ছিল, তা এখন বন্ধ করা হয়েছে।
কোভিড পর্বে গরিব মানুষকে সুরাহা দিতে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’ শুরু করেছিল মোদী সরকার। দুই থেকে তিন টাকা কিলোগ্রাম দরে মাসে মাথাপিছু ৫ কিলোগ্রাম রেশনের পাশাপাশি, বাড়তি ৫ কিলোগ্রাম করে খাদ্যশস্য বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হত। তা নিয়ে প্রচারে মোদী বলতেন, কোভিডের সময় দেশের কোনও গরিবকে খালি পেটে শুতে যেতে হয়নি। গত ডিসেম্বরে মোদী সরকার ঘোষণা করে, বাড়তি রেশন আর দেওয়া হবে না। তবে রেশনে মাথাপিছু ৫ কিলোগ্রাম করে চাল বা গম পুরোটাই বিনামূল্যে মিলবে। এক বছরের জন্য এই প্রকল্পের কথা বলা হলেও মোদী ভোটের প্রচারে গিয়ে, তা আরও
পাঁচ বছরের জন্য বাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।
খাদ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’য় বিনামূল্যে রেশন চালিয়ে যেতে আগামী অর্থবর্ষে বাজেটে মাত্র ৭ শতাংশ বেশি খরচ করতে হবে। চলতি অর্থ বছর, ২০২৩-২৪-এর বাজেটে খাদ্য ভর্তুকিতে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। মন্ত্রকের হিসাব, বছর শেষে সংশোধিত খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ২ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকায়। খাদ্য নিগম বাজারে চাল-গমের দাম কেমন থাকবে, তার হিসাব দিয়েছে। সেই অনুযায়ী, আগামী অর্থবর্ষে, ২০২৪-২৫-এ খাদ্য ভর্তুকিতে খরচ করতে হবে ২ লক্ষ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, চলতি বছরের তুলনায় মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা বা ৭ শতাংশ বেশি। খাদ্য মন্ত্রকের তরফে অর্থ মন্ত্রকের কাছে এই টাকা বরাদ্দ করতে আবেদন করা হচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “আগামী অর্থ বছরে খাদ্য ভর্তুকিতে এই যে ২ লক্ষ ৩৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে অনুমান করছি, সেটা কিন্তু কোভিডের সময়ের তুলনায় অনেক কম। কোভিডের পরে বিনামূল্যে বাড়তি রেশন দিতে গিয়ে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ২ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। তার পরের বছরও প্রায় একই পরিমাণ খরচ হয়েছিল। সেই তুলনায় আগামী বছর খাদ্য ভর্তুকিতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হবে। বাড়তি রেশন বন্ধ করে দেওয়ার ফলে সাশ্রয়।”
বিরোধী শিবির থেকে খাদ্যের অধিকারের পক্ষে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, মোদী সরকার আসলে বিনামূল্যে রেশনের কথা বলে ভোটের প্রচার করছে। কিন্তু বাস্তবে ১০ কোটি মানুষকে রেশনই দিচ্ছে না। ইউপিএ সরকারের খাদ্য সুরক্ষা আইনে অনুযায়ী, শহরের ৫০ শতাংশ মানুষ, গ্রামের ৭৫ শতাংশ মানুষের রেশন পাওয়ার কথা। সেই অনুযায়ী ২০১১ সালের জনগণনার হিসেবে ৮০ কোটি মানুষকে রেশন দেওয়া শুরু হয়েছিল। ২০২১-এ জনগণনা করায়নি মোদী সরকার। তবে জনসংখ্যা বেড়ে ১৪০ কোটি ছাপিয়ে গিয়েছে বলে অনুমান। সেই হিসেবে ৯০ কোটি মানুষের রেশন পাওয়ার কথা। সরকার এই ১০ কোটি মানুষকে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’র আওতায় বাইরেইরেখে দিয়েছে।