প্রতীকী ছবি।
দেশে গমের রেকর্ড ফলন হওয়া সত্ত্বেও আচমকাই বিদেশে গম রফতানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ওই সিদ্ধান্তে আখেরে গম চাষিদের ক্ষতি হল বলে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
অথচ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে বিশ্ব গম রফতানির বাজার ধরার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। এমনকি দু’দিন আগেই গমের ‘বাম্পার’ ফলন হওয়ার কথা মাথায় রেখে ৯টি দেশে গম রফতানির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বাণিজ্য দল পাঠানোর কথা জানিয়েছিল কেন্দ্র। খোদ প্রধানমন্ত্রী দিন কয়েক আগে জার্মানি সফরে গিয়ে দাবি করেছিলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন অনুমতি দিলে ভারত বাকি বিশ্বকে খাদ্যশস্যের জোগান দিতে এগিয়ে আসতে পারে। দেশের গম চাষিরা যখন বিদেশে গম রফতানি করে বাড়তি অর্থের মুখ দেখছিলেন, তখনই আজ কেন্দ্র বিদেশে গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পঞ্জাবের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের প্রতাপ সিংহ বাজওয়া বলেন, ‘‘পঞ্জাবের চাষিরা সবেমাত্র গমে ৫০-৬০ থেকে ১০০ টাকা বেশি পাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময়ে গমের রফতানি বন্ধ করে দেওয়া হল।’’ তবে যে সব দেশে গম পাঠানোর প্রশ্নে ইতিমধ্যেই চুক্তি হয়ে গিয়েছে, সেই সব দেশে গম পাঠানোর প্রশ্নে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র। আজ কেন্দ্রের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, দেশের মানুষকে খাদ্য সুরক্ষা দিতে ও প্রতিবেশী ও দুর্বল দেশগুলিকে সাহায্য করার লক্ষ্যে গম রফতানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। ভারতের ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সরব হয়েছে জি-৭ গোষ্ঠী। জার্মানির কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিভিন্ন দেশ যদি একের পর এক রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হবে।’’
অথচ দু’দিন আগেই কেন্দ্র জানিয়েছিল, দেশে বিপুল পরিমাণে গম উৎপাদন হওয়ায় ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, তাইল্যান্ড, তুরস্ক, টিউনিশিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া, লেবানন, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলিতে গম রফতানির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বাণিজ্য দল পাঠানো হবে। সেই কারণে দেশের গম চাষি, ব্যবসায়ী ও রফতানিকারীদের বিদেশে পাঠানো গমের গুণমান বজায় রাখতে পরামর্শ দেয় খাদ্য মন্ত্রক। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের দু’দিনের মধ্যে সরকারের অবস্থান ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের মতে, মরসুমে রেকর্ড ফলনের আশা থাকলেও, দ্রুত গরম পড়ায় ও গত মার্চে প্রবল দাবদাহে গমের ফলনের বিপুল ক্ষতি হয়। যেখানে গোড়ায় ১১১৩ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়। কিন্তু গরমের কারণে ওই লক্ষ্যমাত্রা নেমে আসে ১০৫০ টনে। উপরন্তু চিনেও দাবদাহের কারণে গম নষ্ট হওয়ায় বিপুল পরিমাণে গম ভারত থেকে সংগ্রহ করছিল সেই দেশের সরকার। এতে আগামী দিনে দেশের মানুষের খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ঝুঁকি না নিয়ে রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র।
সরকারের সেই যুক্তি মানতে নারাজ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। তিনি বলেন, ‘‘আসল সমস্যা হল সরকার চাষিদের কাছ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ গম কিনতে ব্যর্থ হয়েছে। উৎপাদন মার খাওয়ার যে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তা ঠিক নয়। যদি সরকার ঠিক পরিমাণে গম কিনত, তা হলে আর রফতানি বন্ধ করার প্রয়োজন হত না। সরকারের ওই সিদ্ধান্ত কৃষি বিরোধী। এতে চাষিরা বিশ্ব বাজারে বেশি দামে গম বিক্রির সুযোগ হারাল।’’
অতীতে মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে ‘নীতিপঙ্গুত্বের’ অভিযোগ করতেন নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু এ যাত্রায় গম রফতানির প্রশ্নে কার্যত কেঁচে গণ্ডুষ করতে হল সেই বিজেপি সরকারকেই। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘প্রচার যখন নীতিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, তখন নীতিপঙ্গুত্বের শিকার হয় সরকার।’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির মতেও, ‘‘আসল সমস্যা, গত তিন মাসে গম সংগ্রহ অর্ধেকের কম হয়েছে। গমের জোগান নেই বললেই চলে রেশন দোকানগুলিতে।’’ আর কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, ‘‘দু’দিন আগেই রফতানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। তার আগে নরেন্দ্র মোদী এ মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বকে খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যারা কথায় কথায় ৭০ বছরের হিসাব চায়, তারা ৭০ দিনের হিসাব রাখতে পারছে না।’’