সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তকে নয়াদিল্লি ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (এনডিআইএসি) চেয়ারপার্সন নিযুক্ত করল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রকের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই খবর জানানো হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ ভাবে এত দ্রুত সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় ফের বেধেছে বিতর্ক। অবসরের পরে নতুন দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগ কর্মরত বিচারপতিদের বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রসঙ্গত বিচারপতি গুপ্ত সম্প্রতি কর্নাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। বছর কয়েক আগে একবার তাঁর বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন সম্পত্তির অভিযোগ উঠেছিল। সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর কী পদক্ষেপ করেছিলেন, তা জানতে চেয়ে সম্প্রতি তথ্যের অধিকার আইনে আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সে ব্যাপারে উত্তর দেয়নি।
আজ বিচারপতি গুপ্তের নিয়োগের খবর সামনে আসার পরেই আইনজীবী-রাজনীতিক কপিল সিব্বল টুইট করে বলেন, ঘটনাটি ‘দুর্ভাগ্যজনক’। প্রাক্তন আইনমন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলির কথা মনে করিয়ে তিনি লেখেন, ‘‘আমার বন্ধু জেটলি বলতেন, অবসরের মুখে দাঁড়ানো বিচারপতিরা অবসর-পরবর্তী কাজের আকাঙ্ক্ষায় প্রভাবিত থাকেন।’’ রাজনৈতিক শিবিরের মতেও, জেটলি জোর দিয়েই এ কথা বলতেন এবং তাঁর বক্তব্য ছিল, অবসরের পরে অন্তত দু’বছর বিচারপতিদের কোনও দায়িত্বে নিয়োগ না করাই উচিত। তিনি এ বিষয়ে নির্দিষ্ট আইনেরও পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সে পথে হাঁটেনি।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসর নেওয়ার পরপরই বিচারপতি এ কে গয়াল জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। সিবিআই প্রধান পদে রাকেশ আস্থানার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা আবেদন খারিজ করা বিচারপতি আর কে আগরওয়াল অবসরের পরেই চেয়ারম্যান হন জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের (ন্যাশনাল কনজ়িউমার রিড্রেসাল কমিশন)। কেরল হাই কোর্টের বিচারপতি অ্যান্টনি ডমিনিক অবসর নেওয়ামাত্র রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্ব পান। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ তো সরাসরি রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবেই যোগ দেন। বিচারপতি গুপ্ত যাচ্ছেন এনডিআইএসি-তে। বিচারপতি গুপ্ত ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে নিযুক্ত হন। তার আগে তিনি মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং পঞ্জাব-হরিয়ানা হাই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন।
এনডিআইএসি বা নয়াদিল্লি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা কেন্দ্র একটি স্বাধীন ও স্বশাসিত সংস্থা। প্রাতিষ্ঠানিক মধ্যস্থতা, সালিশি, বিবাদ নিরসনের কাজ করে থাকে তারা। ২০১৯ সালে এই সংস্থার জন্ম এবং সংসদীয় আইন বলে তা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নথিভুক্ত। বিচারপতি গুপ্ত এর চেয়ারপার্সন হচ্ছেন। গণেশ চন্দ্রু এবং অনন্তবিজয় পাল্লি হচ্ছেন আংশিক সময়ের সদস্য।