প্রতীকী ছবি।
স্তন্যদায়িনী মায়েদের করোনার টিকাকরণে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আগেই ছাড়পত্র দিয়েছে। তাঁরা টিকা নিলে সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও তার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, মনে করিয়ে দিলেন আইসিএমআর-এর এপিডেমিয়োলজি ও কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়েস বিভাগের প্রধান সমীরণ পাণ্ডা। তিনি জানান, মায়ের টিকা নেওয়া থাকলে স্তন্যপান করানোর সময়ে তাঁর শরীরের অ্যান্টিবডি শিশুর দেহেও যায়। তাই নির্দ্বিধায় মায়েদের টিকা নিতে বলেছেন তিনি।
বস্তুত, অন্তঃসত্ত্বাদের টিকাকরণের ছাড়পত্র দেওয়ার সময়েও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছিলেন যে, মা ও শিশুর সুরক্ষার জন্যই টিকাকরণ জরুরি। এমন নয় যে, অন্তঃসত্ত্বা হলে কোভিড হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বার কোভিড হলে তাঁর নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। ক্ষতি হতে পারে ভ্রূণের। সময়ের আগে প্রসব, সদ্যোজাতের মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে। তাই অন্তঃসত্ত্বাদেরও নিকটবর্তী টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করে টিকা নিতে বলেছে কেন্দ্র।
সমীরণবাবু জানান, বর্তমানে ভারতে যে সমস্ত প্রতিষেধক রয়েছে, সেগুলি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের নতুন স্ট্রেনগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর বলেই আইসিএমআরের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে। তবে স্ট্রেন-বিশেষে এই কার্যকারিতার তারতম্য হতে পারে। ভাইরাসের চরিত্র বদল একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তার জন্য আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। আশা করা যায়, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো কোভিডও আঞ্চলিক রোগে পরিণত হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের চরিত্র বদলের কথা মাথায় রেখে তার প্রতিষেধকে ছোটখাটো পরিবর্তন করা হয়। সেই কারণেই বয়স্কদের প্রতি বছর প্রতিষেধক নিতে বলা হয়। কোভিডের টিকাকরণে জোর দিয়ে তিনি জানান, প্রতিষেধক সংক্রমণকে রুখবে না। কিন্তু রোগের উপশমের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা রয়েছে। অ্যাস্থমা, ধুলো বা পরাগরেণুতে অ্যালার্জির মতো সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁরাও নিশ্চিন্তে প্রতিষেধক নিতে পারেন। কোমর্বিডিটি থাকলে শরীরের অবস্থা বুঝে প্রতিষেধক নিয়ে ফেলাই ভাল। বিদেশি প্রতিষেধক কবে আসবে, তার অপেক্ষায় বসে থাকলে আদতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিই বাড়বে বলে সাবধান করে দিয়েছেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশে দু’জন করোনা রোগীর নমুনায় ভাইরাসের ‘কাপা’ স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে। লখনউয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি আছেন তাঁরা। রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বাস্থ্য) অমিত মোহন প্রসাদ বলেন, ‘‘ভাইরাসের এই প্রজাতিটি আগেও রাজ্যে পাওয়া গিয়েছে। উদ্বেগের কিছু নেই।’’ কাপা স্ট্রেনকে ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব ইন্টারেস্ট-এর তালিকায় রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ফেব্রুয়ারি ও মার্চেও দেশে এই স্ট্রেনের অস্তিত্ব মিলেছিল বলে কেন্দ্র জানিয়েছে। করোনার ‘ল্যাম্বডা’ স্ট্রেনটিকেও এই নজরদারি-তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে ভারতে এই স্ট্রেনে সংক্রমণের কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি বলে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বি কে পল জানান।
উত্তরপ্রদেশে এখনও পর্যন্ত ১০৭ জনের নমুনায় অতি-সংক্রামক ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন মিলেছে। আজ দিল্লি বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের পর্যালোচনা বৈঠকে উপরাজ্যপাল অনিল বৈজল ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন রুখতে আধিকারিকদের সতর্ক থাকতে বলেছেন। বাজারের মতো জায়গায় ভিড়ের খবরের উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল বৈঠকে ছিলেন। দেশে দৈনিক সংক্রমণ গত ২৪ ঘণ্টায় সামান্য কমলেও কেরল ও মহারাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা থাকছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনও শেষ হয়নি। ৬৬টি জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি।