রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয়রা গড়ে প্রতিদিন ৪২২ মিনিট বা সপ্তাহের ছয় দিন মোট ৪২ ঘণ্টার মতো কাজ করেন। —ফাইল চিত্র।
সরকারি কর্মীরা গড়পড়তা ভারতীয়দের থেকে কম সময় কাজ করেন। বেসরকারি বা কর্পোরেট সংস্থার কর্মীদের থেকে বেশ অনেকখানি সময়ই কম কাজ করেন তাঁরা। এই তথ্য তুলে ধরে আজ প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের রিপোর্ট জানিয়েছে, গড় ভারতীয়রা উন্নত দেশগুলির তুলনায় বেশিই কাজ করেন। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কর্মীদের সমান সময় কাজ করেন। তবে এটাও ঠিক, বেশি সময় কাজ করলে দেশের আর্থিক উন্নতির গতি বাড়ে।
ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণমূর্তি কিছু কাল আগে বলেছিলেন, দেশের আর্থিক উন্নতির স্বার্থে তরুণদের সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা উচিত। তরুণদের মধ্যে কঠিন পরিশ্রমের মানসিকতা আনতে হবে। তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি।
সম্প্রতি এল অ্যান্ড টি-র চেয়ারম্যান এস এন সুব্রহ্মণ্যন আবার মন্তব্য করেন, সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করা উচিত। রবিবারেও বাড়ি বসে বউয়ের দিকে না তাকিয়ে থেকে অফিসে যাওয়া উচিত। এ নিয়েও বিস্তর বিতর্ক, রসিকতা চলছে। এই আবহেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ জানাল, উন্নত দেশগুলির তুলনায় এ দেশের গড়পড়তা কর্মীরা বেশি কাজই করেন। উন্নয়নশীল অন্য দেশগুলির নিরিখেও সমান সময় কাজ করেন।
পরিষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয়রা গড়ে প্রতিদিন ৪২২ মিনিট বা সপ্তাহের ছয় দিন মোট ৪২ ঘণ্টার মতো কাজ করেন। সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা উচিত বলে যে দাবি উঠেছিল, তার থেকে এই সময় অনেকটাই কম। সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা মানুষের সংখ্যা সব থেকে বেশি গুজরাতে। সব থেকে কম বিহারে।
এক সময় সরকারি কর্মচারীদের সম্পর্কে রসিকতা করে বলা হত, ‘আসি যাই, মাইনে পাই’। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের রিপোর্ট বলছে, গড়ে সরকারি কর্মীরা যে কোনও বেসরকারি বা কর্পোরেট সংস্থার কর্মীর থেকে দিনে ৪৫ মিনিট কম সময় কাজ করেন। বেসরকারি বা কর্পোরেট সংস্থায় স্থায়ী চাকরিরত শহুরে ভারতীয়রা সব থেকে বেশি সময় কাজ করেন। সরকারি কর্মচারীরা গড়পড়তা ভারতীয়দের থেকে সপ্তাহে কয়েক ঘণ্টা কম সময় কাজ করেন। বেসরকারি বা কর্পোরেট সংস্থার কর্মীদের তুলনায় বেশ অনেকখানি সময় কম কাজ করেন।
কেন্দ্রীয় সরকারেরই পরিসংখ্যান কাজে লাগিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন পরিষদের সদস্য শমিকা রবি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এতে কোনও ভুল নেই যে, বেশি কাজ করলে মাথা পিছু জিডিপি বাড়ে। যদি আর্থিক কর্মকাণ্ডে ১ শতাংশ বেশি সময় দেওয়া হয়, তা হলে মাথাপিছু রাজ্যের উৎপাদন ১.৭ শতাংশ বাড়ে। বড় রাজ্যের ক্ষেত্রে ৩.৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি দেখা যায়।’’ যার অর্থ, আর্থিক কর্মকাণ্ডে বেশি সময় দিলে অর্থনীতিতে তার ফায়দা মেলে। এই বিষয়টি সরকারি কর্মী ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মানুষের জন্য বিশেষ ভাবে মনে করিয়ে দিয়েছেন শমিকা। কারণ সরকারি কর্মী ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির কর্মীরা অন্যদের তুলনায় কম সময় কাজ করেন বলে রিপোর্টে প্রকাশ।