Congress

Nehru-policy: চলতি সঙ্কটে ফিরছে নেহরু-নীতি, দাবি বিরোধীদের

বিরোধীদের দাবি, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বিদেশনীতিকেই এ ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৩৩
Share:

বাবু জগজীবন রামের জন্মজয়ন্তীতে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন রাহুল ও সনিয়া গাঁধী। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

গত দেড় মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত ‘ভারসাম্যের বিদেশনীতি’ বজায় রেখে এগোচ্ছে বলেই মত কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। অর্থাৎ আমেরিকা তথা পশ্চিমের চাপে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে রাষ্ট্রপুঞ্জে নয়াদিল্লি ভোট দেয়নি। পশ্চিমের আর্থিক নিষেধাজ্ঞাকে কার্যত তোয়াক্কা না করেই মস্কো থেকে শস্তায় অশোধিত তেল কিনেছে। অথচ পশ্চিমের সঙ্গে সুর মিলিয়ে অবিলম্বে হিংসা বন্ধের আবেদন করে সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা বহাল রাখার ডাকও দিয়ে চলেছে ভারত।

Advertisement

অর্থাৎ রাশিয়া ও আমেরিকা কারও কোলেই ঝোল টেনে অন্যের জন্য দরজা বন্ধ করতে চাওয়া হচ্ছে না, এটা স্পষ্ট। বিরোধীদের দাবি, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বিদেশনীতিকেই এ ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হচ্ছে, যদিও ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে না।

এই প্রসঙ্গে আজ প্রথমেই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকে জওহরলাল নেহরুর জোট নিরপেক্ষ বিদেশনীতির প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখে এই নীতিকে মান্যতা না দিলেও বর্তমান সঙ্কটে সেই জোট নিরপেক্ষতারই দ্বারস্থ হচ্ছে মোদী সরকার।’’ সনিয়ার সকালের বক্তৃতার পরে আজ দুপুর থেকে লোকসভায় ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে দিনভর আলোচনায় কংগ্রেসের সাংসদদের বক্তব্যে বারবার উঠেছে এসেছে জওহরলাল এবং জোট নিরপেক্ষতার প্রসঙ্গ। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তৃতাতেও ছিল দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতির কথা।

Advertisement

সনিয়া আজ কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকে বলেন, “ভারতের বিদেশনীতির ভিত তৈরি করেছে জোট নিরপেক্ষতার নীতি। অথচ তাকে বারবার সমালোচনা করা হয়েছে। আজ এটা দেখে আমি খুশি যে বিশেষ স্বীকৃতি না দিলেও সেই জোট নিরপেক্ষতাকেই আজ পুনরাবিষ্কার করা হয়েছে।” কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ মণীশ তিওয়ারির বক্তব্য, “এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার সতর্ক ভাবেই পা ফেলছে। খুবই সরু দড়ির উপর দিয়ে হাঁটছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে চাপ কিন্তু আরও বাড়বে। আমেরিকা এবং ব্রিটেনের কর্তারা এসে যে ভাবে ভারতকে রাশিয়া সম্পর্কে সতর্ক করে গিয়েছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে যে এ সবে শুরু।” এর পরেই তিনি বলেন,“আমি সরকারকে পরামর্শ দিতে চাই, জোট নিরপেক্ষতার যে নীতি ১৯৪৬ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত ভারতকে সুঠাম ভাবে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল, সেই নীতিতেই ফিরে যাওয়া এখন ঠিক হবে। আমি জানি যে সরকারপক্ষের বন্ধুরা দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সমালোচনা করার জন্য কোনও উপায়ই বাদ দেননি। প্রতিটি নিঃশ্বাসে তাঁরা সেই কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু এটা ঘটনা, ওই নীতিগুলি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ইউক্রেনের সঙ্কটে যে অবস্থান ভারত সরকার নিয়েছে তা ওই নীতিগুলিরই সুরে বাজছে। আমাদের দেশ গঠনের সময় যা তৈরি হয়েছিল।” কংগ্রেসের আর এক লোকসভার সাংসদ শশী তারুর ইউক্রেন নিয়ে বলার সময় ভারতকে নেহরুর ‘পঞ্চশীল নীতির’ কথা উল্লেখ করেছেন। অন্য রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করা, সার্বভৌমত্ব, পরস্পরের প্রতি হিংসা পোষণ না করার মতো পঞ্চশীলের এই নীতিগুলির কথাই নয়াদিল্লি সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জে বারবার করে বলছে রাশিয়া-ইউক্রেন প্রসঙ্গে।

শুধু কংগ্রেসই নয়, কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্স বা তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরাও আজ নেহরুর বিদেশনীতি প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন। এনসি নেতা ফারুক আবদুল্লার কথায়, “নেহরু তাঁর বিদেশনীতির প্রশ্নে কোনও পক্ষ অবলম্বন না করে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেন যাতে সব রাস্তাই খোলা থাকে। আজকের সরকারেরও তাই করা উচিত।” তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের কথায়, “আজ এই সঙ্কটের সময়ে যদি পণ্ডিত নেহরু থাকতেন তাহলে কী করতেন তিনি? তিনি ছিলেন প্রকৃত রাষ্ট্রনেতা। এক জন রাষ্ট্রনেতাই বিদেশনীতি সবচেয়ে ভাল পরিচালনা করতে পারেন।” কোরিয়ার যুদ্ধের সময়ে নেহরুর ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে তির্যক মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে সৌগত রায়কে। তাঁর বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী মোদী গোটা বিশ্বে ঘুরে বেড়ান। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পিঠ চাপড়ে এসেছিলেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। এখন প্রয়োজন পণ্ডিত নেহরু বা কৃষ্ণ মেননের মতো দক্ষ নেতার।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement