বিশ্বেশ্বর টুডু । —ফাইল চিত্র।
অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে কত মৃতদেহ ভেসেছে গঙ্গার স্রোতে, জানে না সরকার। সোমবার রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় জলশক্তি প্রতিমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর টুডু জানিয়েছেন, এই সংক্রান্ত কোনও পরিসংখ্যান নেই।
অধিবেশনে ডেরেক জানতে চান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে গঙ্গায় কত দেহ ভেসেছে? সেগুলির শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে? বিশ্বেশ্বর মেনে নিয়েছেন, মূলত উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে গঙ্গার জলে আর চরে ‘‘দাবিদারহীন, অশনাক্ত, পোড়া বা আধপোড়া’’ দেহ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড-যোগ থাকা আনুমানিক কত মৃতদেহ গঙ্গায় ফেলা হয়েছে, সেই তথ্য নেই।’’ জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির থেকে মন্ত্রক রিপোর্ট তলব করেছে। অ্যাডভাইজ়রি পাঠানো হয়েছে উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিবদের। ডেরেকের অভিযোগ, ‘‘সরকার মিথ্যে বলছে। তথ্য লুকোচ্ছে।’’
গত মে-জুনে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ শিখরে থাকাকালীন রোজ বিহার ও উত্তরপ্রদেশে গঙ্গা দিয়ে দু’বেলা ভেসে গিয়েছে শত শত শবদেহ। কুংস্কার, অসহায়-বিশ্বাস, চূড়ান্ত দারিদ্র্য— প্রত্যন্ত ভারতের কোভিড পর্বের নানা উপাখ্যান তখন ধারণ করেছে গঙ্গা। শোনা গিয়েছে, মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সৎকারের কাঠের দাম কালোবাজারে চড়ার কথা, যদিও তা অস্বীকার করে সরকার।
ওই সময়ে দায় ঠেলাঠেলি চলছিল উত্তরপ্রদেশ আর বিহার সরকারের। অনেকেরই অভিযোগ, বেশি দেহ উত্তরপ্রদেশ থেকে গঙ্গায় ভেসেছে। স্রোতের টানে এসে ঠেকেছে নীচের বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে। করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে যখন যোগী সরকার বিদ্ধ, দিনরাত জ্বলতে থাকা চিতার ছবি ভাইরাল হওয়ায় ছাউনিতে ঢেকে দেওয়া হয় লখনউয়ের শ্মশান।
মে-র মাঝামাঝি নড়েচড়ে ওঠে কেন্দ্র। বিহার ও উত্তরপ্রদেশ সরকারকে ভেসে আসা দেহগুলির যথাযোগ্য সৎকার করে নতুন দেহ না-ভাসা নিশ্চিত করতে বলা হয়। মাস খানেকের ব্যবধানে যোগী সরকার কোভিড-মোকাবিলায় ‘‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’’ বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রাজনীতির অনেকেরই মতে, উত্তরপ্রদেশে ভোটের মুখে গঙ্গাবাহিত দেহের প্রসঙ্গ ফের ওঠায় হাওয়া লাগতে চলেছে বিরোধীদের
পালে। কংগ্রেস সহ বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশেই যে মূলত গঙ্গায় দেহ ভেসেছে,
তা মানলে মুখ পুড়ত যোগী ও বিজেপির। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উত্তর ‘এড়ানোর চেষ্টা’।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা কে সি বেণুগোপাল উল্লেখ করেছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু নিয়ে তাঁর তোলা প্রশ্নেও একই উত্তর ছিল কেন্দ্রের। তিনি বলেন, ‘‘সরকার সংসদকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’’ আরজেডি-র মনোজ ঝা বলেছেন, ‘‘এর থেকে সংবেদনহীন উত্তর আর কিছুই হতে পারত না।’’