সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।
যাঁদের হাতে নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্ব, সেই নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ নিয়ে মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টে আরও কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়ল।
এক সপ্তাহ আগেই নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসবে কেন্দ্রীয় সরকার অরুণ গয়ালকে নিয়োগ করেছে। আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল খতিয়ে দেখে প্রশ্ন তুলল, আলোর গতিতে, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কী ভাবে তাঁকে নিয়োগ করা হল? বিচারপতি কে এম জোসেফের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ মোদী সরকারকে প্রশ্ন করেছে, ‘‘এত তাড়াহুড়ো করা হল, একেবারে জরুরি ভিত্তিতে, আপনাদের বিবেচনা করারও সময় দরকার পড়েনি?”
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিরোধী দলগুলি প্রশ্নের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একগুচ্ছ মামলা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, কেন্দ্রীয় সরকার নিজের অনুগত আমলাদেরই নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ করে। সেই মামলাতেই বুধবার আদালত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল দেখতে চায়। ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার হিসেবে গয়ালকে নিয়োগ করা হয়। তা নিয়েই আজ প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। গয়াল কেন্দ্রে ভারী শিল্প মন্ত্রকের সচিব ছিলেন। তাঁর ৩১ ডিসেম্বর অবসর নেওয়ার কথা ছিল। ১৮ নভেম্বর তিনি স্বেচ্ছাবসর নেন। সে দিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে এক দিন পরেই তাঁকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ করা হয়।
বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার অবসর নেওয়ার পরে ২০২৫-এ তিনিই ওই পদে বসবেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, নির্বাচন কমিশনে একটি পদ মে মাস থেকে ফাঁকা পড়েছিল। তা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাড়াহুড়ো করে নিয়োগের কী প্রয়োজন পড়ল?
বিচারপতি জোসেফ প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা ভাবনাচিন্তা করার জন্যও সময় নিলেন না?” বিচাপতি অজয় রাস্তোগির প্রশ্ন, ‘‘যে দিন আবেদন জমা পড়ল, সে দিনই গৃহীত হল, সেই দিনেই নিয়োগ হল, ফাইল পাশহতে ২৪ ঘণ্টাও লাগল না। কী রকম যাচাই হল?”
কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটারামনি বলেন, ২০১৫-র পরে অনেক ক্ষেত্রেই দু’তিন দিনের মধ্যে নিয়োগ হয়েছে। দ্রুত নিয়োগ হলেও কি ভুল ধরা হবে? বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু বলেন, ‘‘স্বেচ্ছাবসরের পর দিনই গয়ালকে নিয়োগ করা হয়েছে। এমনটাই কি হয়ে থাকে?” বেঙ্কটারামনি বলেন, এটা কাকতালীয়ও হতে পারে। তাঁর যুক্তি, আনুগত্যটা আপেক্ষিক বিষয়। এমন নয় কিছু অনুগত লোক ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর তাঁদের নিয়োগ করা হচ্ছে। যে চার জনের মধ্যে থেকে গয়ালকে বেছে নেওয়া হয়েছে, সেই চার জনের নাম কী ভাবে ঠিক হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি জোসেফ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার থেকে পদোন্নতি দিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার করা হচ্ছে। সংবিধানের ভাবনা ছিল, সরাসরি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার করা হবে। তিনি ছয় বছর স্বাধীন ভাবে পদে থাকবেন। দিনের শেষে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এ বিষয়ে রায় সংরক্ষিত রেখেছে।