প্রতিবাদে অনড়: গাজিপুর সীমানায় বিক্ষোভস্থলের কাছে এক বৃদ্ধ কৃষক। বুধবার। পিটিআই
প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল থেকে হিংসা ছড়িয়েছিল। সরকারের মাথাব্যথ্যা এখন শনিবারের ‘চাক্কা জ্যাম’। ৬ ফেব্রুয়ারি কৃষকদের ওই কর্মসূচির কথা মাথায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আলোচনা হল আজ। সরকারি সূত্রের দাবি, মন্ত্রিসভার বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কৃষকদের ‘চাক্কা জ্যাম’-এর দিন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কী কী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে জানান।
প্রজাতন্ত্র দিবসের হিংসা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিশনকে দিয়ে তদন্ত করানোর আর্জিটি আজ খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের বক্তব্য, হিংসাকে মেনে নেওয়া হচ্ছে, এমন তো নয়। সরকারই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, আইন আইনের পথে চলবে। এই পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিকে হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয়। আবেদনকারীরা চাইলে সরকারের কাছেই তাঁদের বক্তব্য জানাতে পারেন।
প্রজাতন্ত্র দিবসের ওই ট্র্যাক্টর মিছিলের পরে কৃষক সংগঠনগুলির মঞ্চ, সংযুক্ত কিসান মোর্চা ১ ফেব্রুয়ারি সংসদ অভিযানেরও ডাক দিয়েছিল। কিন্তু ট্র্যাক্টর মিছিল থেকে লাল কেল্লায় হাঙ্গামার পরে সেই অভিযান বাতিল করা হয়। তবে ৬ ফেব্রুয়ারি ‘চাক্কা জ্যাম’-এর কর্মসূচি বহাল রয়েছে। বিজেপি তথা সরকারও কৃষি আইন নিয়ে অটল অবস্থানেই রয়েছে। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা পুলিশ দিল্লির সীমানায় পুলিশ লোহা ও কংক্রিটের ব্যারিকেড গড়ে, কাঁটাতার দিয়ে, রাস্তায় পেরেক পুঁতে, জল-বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে, বিরাট বাহিনী মোতায়েন করে প্রতিবাদ স্থলগুলি ঘিরে ফেলেছে। এর বিরুদ্ধে আজ সংসদেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
সংসদে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, মোদী সরকার ব্রিটিশদের মতো কৃষক আন্দোলন দমন করতে চাইছে। পাল্টা আক্রমণে গিয়ে বিজেপি নেতা ভুবনেশ্বর কলিতা বলেন, “কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলের বন্ধুদের কাছে অনুরোধ, আর একটা শাহিন বাগ তৈরির চেষ্টা করবেন না।” নয়া নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র বিরুদ্ধে শাহিন বাগে দীর্ঘদিন মুসলিম মহিলাদের আন্দোলন চলেছিল। কলিতা বলেন, “বিরোধীরা আর একটা শাহিন বাগ খাড়া করতে চাইছে।”
কৃষক নেতারা আজ অভিযোগ তুলেছেন, প্রতিবাদ স্থল ঘিরে ফেলে, শৌচালয়ে যাওয়ার রাস্তাও পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গোটা এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে। এ থেকে রোগ ছড়াবে। সরকার তার জন্য দায়ী থাকবে। কিন্তু কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর একে ‘স্থানীয় প্রশাসন’-এর বিষয় বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। কৃষক নেতাদের দাবি, সরকার তাঁদের আলোচনায় বসার কথা বলছে। কিন্তু প্রশাসন হেনস্থা করছে। তোমর বলেন, “কৃষকরা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলুন। আমি আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলব না। এটা আমার কাজ নয়।” কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরে ঘরোয়া ভাবে আর কোনও আলোচনা হচ্ছে না বলেও তোমরের দাবি।