মোদী-কেজরীবাল
হাসপাতালের বাইরে অ্যাম্বুল্যান্সে কোভিড রোগী। কিন্তু হাসপাতাল রোগীদের ভর্তিই নিতে চাইছে না। কারণ হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব। অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে তা কখন মিলবে, তার নিশ্চয়তা নেই।
দেশের রাজধানীতে যখন এই পরিস্থিতি, তখন অক্সিজেনের জোগান দেওয়ার দায়িত্ব কার, তা নিয়ে দিল্লি হাই কোর্টে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে চলছে দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবালের সরকারের বাগ্যুদ্ধ। দিল্লি সরকারের আইনজীবী রাহুল মেহরার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অক্সিজেনের বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে। অন্য দিকে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার অভিযোগ, দিল্লির সরকার অক্সিজেনের ট্যাঙ্কারই জোগাড় করেনি।
অক্সিজেনের অভাবে গত শুক্রবার রাতে দিল্লির জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালে অন্তত ২০ জন রোগীর মৃত্যু হয়। তার আগে গঙ্গারাম হাসপাতালে ২৫ জন রোগীর মৃত্যুর পিছনেও অক্সিজেনের অভাব কারণ ছিল বলে আশঙ্কা। আজ দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি ও বিচারপতি রেখা পাল্লির বেঞ্চ সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করায় কেন্দ্রের হয়ে সলিসিটর জেনারেল বলেছেন, ‘‘আমরা অক্সিজেন জোগান না দেওয়ার জন্য এটা হয়নি। এটা আমার কাজ নয়। এটা রাজ্য সরকারের কাজ।’’
দু’পক্ষই দায় এড়িয়ে যাওয়ায় আজ বিচারপতিরা একইসঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যকে তোপ দেগে বলেছেন, ‘‘অক্সিজেন জোগানো কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারেরই কাজ। কেউ বলতে পারে না যে এটা আমার কাজ নয়।’’
কেন্দ্র ও রাজ্যের এই চাপানউতোরের মধ্যে পড়ে অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থা আইনক্সের অভিযোগ, তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। কেন্দ্র দিল্লির জন্য ৮০ টন অক্সিজেন জোগান দিতে বলছে। আগে ১০৫ টন ছিল, তা কমানো হয়েছে। কিন্তু দিল্লির সরকার ১২৫ টন অক্সিজেন জোগান দিতে বলছে। দিল্লি সরকারের অভিযোগ, দিল্লির জন্য বরাদ্দ অক্সিজেন অন্য রাজ্যে আটকে রয়েছে। হাই কোর্ট এ নিয়ে কেন্দ্রকে প্রশ্ন করায় সলিসিটর জেনারেল বলেছেন, রাজ্য সরকার তথ্য দিলে ফৌজদারি অপরাধের মামলা দায়ের হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, অক্সিজেন ট্যাঙ্কারকে অ্যাম্বুল্যান্সের মর্যাদা দিতে হবে।
তাতে যে কাজ হচ্ছে না, তা জানিয়ে আইনক্স সংস্থার অভিযোগ, হরিয়ানার চারটি ট্যাঙ্কার রাজস্থানে আটকে রাখা হয়েছে। আইনক্স অক্সিজেন জোগান দিত। এখন সংস্থাকে অক্সিজেন পরিবহণ করতে বলা হয়েছে। দেশের ৮০০ হাসপাতালে আইনক্স অক্সিজেন সরবরাহ করে। শুধুমাত্র দিল্লির হাসপাতাল থেকে অভিযোগ আসছে। কারণ দিল্লির জন্য ৪৯০ টন অক্সিজেন বরাদ্দ হলেও মাত্র ৩০০ টন মিলছে। ফলে প্রতি দিনই হাসপাতাল থেকে জরুরি বার্তা আসছে।
কেন্দ্রের অভিযোগ, পিএম-কেয়ার্স তহবিল থেকে দিল্লির হাসপাতালে অক্সিজেন উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য অর্থ মঞ্জুর হয়েছে। কিন্তু কেজরীবাল সরকার কিছুই করেনি। উল্টো দিকে কেজরীবাল সরকারের অভিযোগ, এক পয়সাও রাজ্যকে বরাদ্দ করা হয়নি। কেন্দ্র যে সংস্থাকে বরাত দিয়েছিল, তারাই পালিয়ে গিয়েছে।