প্রতীকী ছবি।
দেশ জুড়ে করোনার ঢেউয়ের মধ্যে সেন্ট্রাল ভিস্টাকে ‘জরুরি পরিষেবা’র তকমা দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল কেন্দ্র। দিল্লি হাই কোর্টও প্রকল্পটিকে ছাড় দিয়েছে। কেন এই প্রকল্প ‘জরুরি’, কেন্দ্রীয় পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হরদীপ পুরী ব্যাখ্যা করেছেন একপ্রস্ত। তাতেও বিতর্ক না থামায় রবিবার ‘প্রচার বনাম বাস্তব’ শীর্ষক এক ১৮ পাতার পুস্তিকা প্রকাশ করল পুরীর মন্ত্রক।
ওই পুস্তিকায় পরপর যুক্তি খাড়া করে বোঝাতে চাওয়া হয়েছে, জায়গার যা অভাব, সাংসদদের এখনই বসতে অসুবিধা হয়। আগামী দিনে জনসংখ্যার নিরিখে সাংসদ সংখ্যা বাড়লে সমস্যা আরও বাড়বে। মন্ত্রকের দাবি, নতুন সংসদ ভবনের কথা বলেছিলেন কংগ্রেসের নেত্রী তথা প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমারও।
মন্ত্রক জানিয়েছে, এখন শুধু মাত্র নতুন সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতির জন্য আবাসই তৈরি হচ্ছে। হচ্ছে সেন্ট্রাল ভিস্টা অ্যাভেনিউয়ের কাজও। পরে তৈরি হবে আরও নতুন ভবন, হবে নতুন প্রকল্পও। গোটা প্রকল্পটি চলবে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে এবং সব মিলিয়ে মোটামুটি খরচ ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিক ভাবে নতুন সংসদ ভবনের জন্য ৮৬২ কোটি টাকা ও সেন্ট্রাল ভিস্তা অ্যাভেনিউয়ের জন্য ৪৭৭ কোটি ধরা হয়েছে। তার একটা অংশ মাত্র মেটানো হয়েছে। এই কাজ এখন পিছিয়ে দিতে গেলে বড় সমস্যা হবে। বরাদ্দও বেড়ে গিয়ে চাপ পড়বে কোষাগারে।
মন্ত্রকের দাবি, আগের সংসদ ভবন একেবারে পুরনো, তাতে আধুনিকতার ছোঁয়া নেই। সবারই নাকি খুব অসুবিধা হয়। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বা অন্য সুযোগ-সুবিধা— সবই সেকেলে। যদিও প্রশ্ন উঠছে, অতিমারির মৃত্যুমিছিলের মধ্যে কি আরও কয়েকটা বছর একটু ‘কষ্ট’ করে চালানো যেত না? সে জবাব অবশ্য মেলেনি পুস্তিকায়।
মন্ত্রক দাবি করেছে, জনস্বাস্থ্য খাত থেকে এই নয়া আধুনিক ভবন-মহল তৈরিতে টাকা ঢালা নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। বরং দেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বিপুল বেড়েছে, টিকার জন্যও দেদার টাকার সংস্থান করা হয়েছে। কিন্তু সে টাকা গেল কোথায়, খরচই বা হচ্ছে কী ভাবে? বিরোধীরা সেই প্রশ্নে এখনও সরব। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকাকরণের দায় মোদী সরকার নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। নতুন ভবন বা নয়া রাজপথ তৈরি কি এত জরুরি যে টিকাকরণ খাতে টাকা না ঢেলে এই কাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে?
নতুন অ্যাভিনিউয়ের জন্য দেদার গাছ কাটা নিয়েও অভিযোগ উঠছে। এমনিতেই শুষ্ক, রুক্ষ দিল্লির সবুজে আরও আঘাত রাজধানীর জনগণকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তা নিয়ে সব মহলের চিন্তা রয়েছে। মন্ত্রকের কিন্তু দাবি, তারা কোনও গাছেরই ক্ষতি করছে না, উল্টে সবুজের সমারোহ হবে দিল্লি জুড়ে। সে জন্য দিল্লির উপকণ্ঠে বদরপুরে দেদার গাছও লাগানো চলছে। কিন্তু তত দিন কী হবে, কতটা ক্ষতি হবে দিল্লিবাসীর, উত্তর মেলেনি।