টিকাকরণের পরে কারও মৃত্যু হলে তার ক্ষতিপূরণের দায় কেন্দ্র নেবে না। ফাইল চিত্র।
সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে বাধ্যতামূলক ছিল না করোনার টিকাগ্রহণ। ওই যুক্তি দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামায় নরেন্দ্র মোদী সরকার জানিয়ে দিল, টিকাকরণের পরে কারও মৃত্যু হলে তার ক্ষতিপূরণের দায় কেন্দ্র নেবে না। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে মৃতের পরিবার ক্ষতিপূরণ চাইলে দেওয়ানি আদালতে আবেদনের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।
ভারতে এ বছরের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২১৯.৮৬ কোটি টিকাকরণ হয়েছে। সরকার আদালতে জানিয়েছে, টিকাকরণের পরে শরীরে বিরূপ প্রভাবের লক্ষণ দেখা গিয়েছে ৯২,১১৪ জনের। বিতর্ক তৈরি হয়েছে টিকা নেওয়ার পরে ঘটনাচক্রে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়েই।
কোভিশিল্ড টিকা নেওয়ার কারণে সন্তানেরা মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ করে দুই তরুণীর পরিবার সম্প্রতি কেন্দ্রের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায়। এক তরুণী টিকা নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর থ্রম্বোসিস অ্যান্ড থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমে (টিটিএস) মারা যান। টিকা নেওয়ার পরে বিশ্বে টিটিএস-এ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। ভারতে এখনও পর্যন্ত টিকা নেওয়ার পরে টিটিএস-এ আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ জন, যাঁদের মধ্যে ওই তরুণী-সহ মারা গিয়েছেন ১২ জন। দুই তরুণীর পরিবার বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল বোর্ডের নেতৃত্বে স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থা গঠন ও প্রোটোকল তৈরির দাবি জানিয়েছে।
ওই আবেদনের ভিত্তিতে গত বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আদালতে জানিয়েছে, করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার কারণে শরীরে কী ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ফলে টিকাকরণই ওই মৃত্যুর প্রধান কারণ, এমন বলা সম্ভব নয়। আবেদনকারীর আইনজীবী কলিন গনজ়ালভেসের যুক্তি ছিল, টিকাকরণের ফলে কী ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যেতে পারে, তা টিকা নেওয়ার আগে সম্মতিপত্রে লেখা থাকলে ওই মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হত। কেন্দ্র জানিয়েছে, টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল না, তাই সম্মতিপত্রে ক্ষতিকর প্রভাবের উল্লেখের প্রয়োজন মনে করেনি সরকার।
যদিও লকডাউন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পরে বিমানযাত্রার ক্ষেত্রে টিকা নেওয়া কার্যত বাধ্যতামূলক করেছিল একাধিক বিমানসংস্থা। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারি দফতরের কর্মী, ভোটকর্মী বা শিক্ষকদের কার্যত সরকার বাধ্য করেছে টিকা নিতে। বিরোধীদের অভিযোগ, যেহেতু সরকার টিকাকরণ বাধ্যতামূলক নয় বলে নির্দেশিকা জারি করেছিল, তাই এখন সেই আইনের ফাঁক গলে দায় ঝেড়ে ফেলার কৌশল নিয়েছে। অনেকের দাবি, টিকা সংস্থাগুলিকে যাতে ক্ষতিপূরণ দিতে না হয়, সে জন্যই ওই ফাঁক রাখা হয়েছিল।