জনগণনার কাজের সঙ্গেই এনপিআর-এ সর্বশেষ তথ্য সংযোজনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতীকী ছবি।
তিন বছর আগেই ১৪টি বিরোধীশাসিত রাজ্য জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি বা এনপিআর-এর বিরোধিতা করেছিল। তা সত্ত্বেও এ বার জনগণনার কাজের সঙ্গেই এনপিআর-এ সর্বশেষ তথ্য সংযোজনের কাজ কেন্দ্রীয় সরকার এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে।
আগামী জনগণনার কাজ শুরু হবে কবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বার জনগণনার সময়ে কেউ চাইলে নিজেই নিজের তথ্য জমা করতে পারবেন। সরকারি জনগণনা-কর্মীদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। কিন্তু তার প্রথম শর্ত হল, গোড়াতেই অনলাইনে এনপিআর বা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারে তাঁদের সর্বশেষ তথ্য জমা করতে হবে।
এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছে, বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলি এনপিআর-এর বিরোধিতা করবে বলে কেন্দ্রীয় সরকার কি ঘুরপথে অনলাইনে এনপিআর-এ সর্বশেষ তথ্য সংযোজনের কাজ সেরে ফেলতে চাইছে? বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, তাঁরা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নথি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রয়োজনে যখন জনগণনার কাজ হবে, সে সময় এর বিরোধিতা করা হবে। ২০১১-য় এ দেশে শেষ বার জনগণনা হয়েছিল। তার পরে ২০২১-এ জনগণনা হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও হয়নি। গত জানুয়ারি মাসে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরের আগে জনগণনা হবে না। ফলে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে আদৌ জনগণনা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত সপ্তাহে দিল্লিতে নতুন জনগণনা ভবনের উদ্বোধন করেছেন। সেই অনুষ্ঠানে প্রকাশিত রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, আগামী জনগণনা এ দেশের জন্য প্রথম ডিজিটাল জনগণনা হতে যাচ্ছে। নাগরিকেরা নিজের তথ্য এ বার নিজেরাই জমা করতে পারবেন। তবে তার জন্য আগে এনপিআর-এ সর্বশেষ তথ্য জমা করতে হবে। তার জন্য আধার সংখ্যা বা মোবাইল নম্বর জমা করতে হবে। নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিতর্কের সময় অমিত শাহ ‘ক্রোনোলজি’ বুঝিয়ে বলেছিলেন, প্রথমে নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) আসবে। তার পরে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরি হবে। শেষ ধাপে অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে।
তিন বছর আগে ২০টি বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে সমস্ত বিরোধীশাসিত রাজ্যে এনপিআর বা জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জির কাজও বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, এনপিআর হল এনআরসি-র ভূমিকা বা প্রস্তাবনা। ২০০৩-এর নাগরিকত্ব বিধিতেও বলা রয়েছে, এনআরসি তৈরির প্রথম ধাপ হল এনপিআর। সনিয়া গান্ধীর ডাকা সেই বৈঠক থেকে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, এনআরসি তৈরি করে আসলে সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিশানা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৪টি বিরোধীশাসিত রাজ্য তখন এনপিআর থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।
কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের পাল্টা যুক্তি, ২০১০-এ ইউপিএ সরকারের আমলেই প্রথম এনপিআর তৈরি হয়েছিল। ২০১৫-য় তাতে সর্বশেষ তথ্য সংযোজন করা হয়। এখনই এনপিআর-এ প্রায় ১১৯ কোটি মানুষের তথ্য রয়েছে। ইউপিএ জমানায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছিলেন, “জনগণনার তথ্যের ভিত্তিতেই এনপিআর তৈরি হচ্ছে। সবার তাতে নাম লেখানো উচিত।” এনপিআর-এর ভিত্তিতে প্রথমে রেসিডেন্ট কার্ড, পরে সিটিজ়েনশিপ কার্ড দেওয়া হবে। অথচ পরে চিদম্বরম তথা কংগ্রেসই এর বিরোধিতা করে।