ফাইল চিত্র।
উৎসবের মরসুমেও পেঁয়াজের চড়া দামের ঝাঁজে ‘চোখে জল’ সাধারণ মানুষের। একই কারণে তরকারিতে আলু দেওয়াও কঠিন হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে দীপাবলির আগে অন্তত আরও ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির আশ্বাস দিলেন ক্রেতাসুরক্ষামন্ত্রী পীযূষ গয়াল। দামে রাশ টানতে আমদানি করা হচ্ছে ১০ লক্ষ টন আলুও। শুধু ভুটান থেকেই ৩০ হাজার টন। এ জন্য জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০% করা হয়েছে তাঁর দাবি।
বিরোধীদের বক্তব্য, খাবার পাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম এমন মাত্রাছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থেকেই সংসদে কৃষি বিলের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরা। আপত্তি তুলেছিলেন অত্যাবশ্যক পণ্য মজুতের আইন সংশোধনে। সেই নতুন আইন চালুর এই ক’দিনের মধ্যেই আলু, পেঁয়াজের দরে রাশ টানতে আমদানির রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পেঁয়াজ অগ্নিমূল্য হওয়ায় কী ভাবে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারকে।
পেঁয়াজের আগুনে দামে নাজেহাল দশা সাধারণ মানুষের। মন্ত্রীর দাবি, ইতিমধ্যেই জোগান বাড়িয়ে দামে বাঁধ দিতে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের মারফত আমদানি করা হয়েছে ৭ হাজার টন পেঁয়াজ। তা এসেছে মিশর ও আফগানিস্তান থেকে।
তাতে দেশে খুচরো বাজারে গত তিন দিন প্রতি কিলোগ্রাম পেঁয়াজের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৬৫ টাকা। কিন্তু রাজ্যে অধিকাংশ বাজারে প্রতি কিলোগ্রামে তার দাম এখনও ৮০ টাকার উপরে। এ নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করছেন বিরোধীরা। ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার গয়াল জানান, এ বার পেঁয়াজ আমদানি শুরু করবে নাফেড-ও। তা ছাড়া, সামনের মাস থেকে দেশের কৃষি বাজারগুলিতে (মান্ডি) নতুন ফসল আসতে শুরু করলে, খুচরো বাজারে জোগান বৃদ্ধির সূত্রে দাম কমবে বলেও তাঁর আশা।
কালোবাজারি রুখে পেঁয়াজের দাম কমাতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজের যথেচ্ছ মজুতদারিতে ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে ২৫ টন পর্যন্ত পেঁয়াজ মজুত রাখতে পারবেন পাইকারি বিক্রেতা। খুচরো বিক্রেতারা ২ টন। এ ছাড়া, দাম কমাতে নাফেড ৩৬ হাজার টন পেঁয়াজ বাজারে ছেড়েছে। এর পরেও দরে বাঁধ দিতে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে আমদানির দিকে। এ কথা মনে করিয়ে বিরোধীদের বক্তব্য, নতুন আইনে তো আর মজুতে বাধা নেই। সরকার হস্তক্ষেপ করবে একমাত্র দর আকাশছোঁয়া হলে। ফলে বার বারই এ ভাবে দুর্ভোগ বাড়বে আমজনতার।
কেন্দ্রের যদিও যুক্তি, ২১ অক্টোবর পর্যন্ত হিসেবে দেশে পেঁয়াজের গড় খুচরো দর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২২.১২%। গত পাঁচ বছরের গড় দামের তুলনায় তা ১১৪.৯৬% বেশি। আর নতুন অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে বলাই রয়েছে দ্বিতীয় হিসেবে দর বৃদ্ধি ১০০% ছাড়ালেই হস্তক্ষেপ করবে সরকার। সেই অনুযায়ীই এই সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রের মতে, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো পেঁয়াজ উৎপাদক রাজ্যগুলিতে অতিবৃষ্টির কারণে মার খেয়েছে পেঁয়াজ চাষ। এর পরে খরিফ মরসুমের ৩৭ লক্ষ টন পেঁয়াজ মান্ডিতে পৌঁছলে, ফের কমতে শুরু করবে দাম। বিরোধীদের কটাক্ষ, খোলা বাজারে বিক্রির কথা ফলাও করে বলে দর কমাতে সেই মান্ডিতে বিক্রি হওয়া ফসলের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। আর দরে রাশ টানতে ‘আত্মনির্ভর ভারতের’ ভরসা পেঁয়াজ আমদানি!