প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।—ছবি পিটিআই।
রোগ যে হয়েছে, সেটা কবুল না-করলে আর ওষুধের খোঁজ পড়বে কী ভাবে!
দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে মূলত এই আশঙ্কার কথাই আজ বিরোধী নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তুলে ধরলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সংসদ চত্বরে আজ বি আর অম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময়ে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলতে দেখা গেল সৌগত রায়কে। পরে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা জানালেন, অর্থনীতির বেহাল দশা সম্পর্কেই উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন মনমোহন।
প্রাক্তন অর্থ তথা প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ, সরকার যদি অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ার কথা কিংবা তার যাবতীয় সমস্যার বৃত্তান্ত মানতেই না-চায়, তবে আর তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা হবে কী ভাবে? গোড়ায় এই গলদের জন্যই আসলে সঙ্কট মোকাবিলার জন্য ঝাঁপানো সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন তিনি।
মনমোহনের মতে, একে নোটবন্দির পর থেকে নগদের জোগানে যে ঘাটতি হয়েছে, এখনও তা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি। একেবারে ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে অনলাইনে জিএসটি কিংবা তার রিটার্ন জমা দেওয়া যে কতখানি অসুবিধাজনক হতে পারে, তা-ও এক বারের জন্য চিন্তা করেনি মোদী সরকার। বরং সাত-পাঁচ না-ভেবে তা চালু করে দেওয়া হয়েছে তড়িঘড়ি। এই জোড়া ধাক্কায় জোর ধাক্কা খেয়েছে অর্থনীতি। তার উপরে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কার— সরকারের প্রতি আস্থা চিড় খেয়েছে সকলের। যে কারণে লগ্নিকারীরা বিনিয়োগের ঝুলি উপুড় করতে ভরসা পাচ্ছেন না। চট করে ঋণ দিতে চাইছে না ব্যাঙ্ক। সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরের থাবা কখন ঘাড়ে এসে পড়ে, অনেকেই সিঁটিয়ে রয়েছেন সেই আশঙ্কায়।
অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া সম্পর্কে আগামিকাল রাজ্যসভায় আলোচনা হওয়ার কথা। তার আগে মনমোহনের এই কথাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। প্রথমত কংগ্রেস চায়, অযোধ্যায় রাম মন্দির থেকে সরে এসে প্রচারের আলো পড়ুক অর্থনীতির বেহাল দশার উপরে। আলোচনার বৃত্তে ঘুরপাক খাক তলানিতে ঠেকা বৃদ্ধির হার, চড়া বেকারি, চাহিদার ঘাটতি, কল-কারখানায় উৎপাদনে ভাটা ইত্যাদি। তৃণমূল সমেত সমস্ত বিরোধী দলকেও এতে পাশে চায় তারা। এই আবহে মনমোহনের এ দিনের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।