ছবি সংগৃহীত।
চিন লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে ফেলেছে বলে এ বার সরাসরি অভিযোগ তুলল কংগ্রেস। রাহুল গাঁধীর এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার। আবার স্বীকারও করেনি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, লাদাখের বিজেপি সাংসদ জাময়াঙ্গ সেরিং নামগিয়াল রাহুলকে আজ পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন, কংগ্রেস জমানাতেই চিন লাদাখের অনেকটা অংশ দখল করে ফেলেছিল। কিন্তু রাহুলের দাবি, “চিনারা হেঁটে হেঁটে ঢুকে লাদাখে আমাদের ভূখণ্ড দখল করে ফেলেছে।” লক্ষণীয়, তা অসত্য বলে রবিশঙ্কর প্রসাদ বা বিজেপি সাংসদ উড়িয়ে দেননি। লাদাখে চিন ভারতীয় এলাকা দখল করে রাখেনি বলেও তাঁরা দাবি করেননি।
ভারতীয় সেনা সূত্র বলছে, প্যাংগং লেকের চার নম্বর ফিঙ্গার থেকে আট নম্বর ফিঙ্গার পর্যন্ত গোটা এলাকা চিন মে মাসের গোড়া থেকেই দখল করে রেখেছে এবং ওই এলাকায় ভারতীয় সেনার কোনও নজরদারিই হচ্ছে না। প্যাংগং লেকের মাঝে মাঝে পাহাড়ের কিছু অংশ আঙুলের মতো ঢুকে রয়েছে। এগুলিকে ‘ফিঙ্গার’ বলা হয়। প্রসঙ্গত, দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে বুধবারও বৈঠক হয়েছে।
৫ মে লাদাখের প্যাংগং লেক এলাকায় ভারত ও চিনের সেনার সংঘাত শুরু হয়। তার পর থেকেই দুই বাহিনী লাদাখে পরস্পরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে। শনিবার দুই সেনার কমান্ডার স্তরে বৈঠক হওয়ার পরে ভারত ও চিনের সেনা লাদাখের তিনটি জায়গা—গলওয়ান ভ্যালির ১৪ ও ১৫ নম্বর নজরদারি এলাকা, গোগরা-হট স্প্রিংস-এর ১৭ নম্বর নজরদারি এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান থেকে পিছু হটেছে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রও আজ বেজিংয়ে জানিয়েছেন, কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনায় যে ঐকমত্য হয়েছে, সেই অনুযায়ী দু’পক্ষ কাজ করছে।
আরও পড়ুন: ইতিবাচক ঐকমত্য: বলল চিন, ৩ এলাকায় সেনা প্রত্যাহার হলেও চুপ ফিঙ্গার-৪ নিয়ে
কিন্তু ভারতীয় সেনাকর্তারা একান্তে মানছেন, সংঘাতের যে মূল এলাকা, সেই প্যাংগং লেকের উত্তর তীরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে চিনের সেনা প্রায় ৮ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে এসেছে। ভারত চাইছে, এপ্রিলে যে যে যেখানে ছিল, সেই স্থিতাবস্থা বজায় থাকুক। কিন্তু চিন এ নিয়ে আলোচনাতেই রাজি নয়। তাদের দাবি, এখন তারা যেখানে রয়েছে, সেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হোক। ভারতীয় সেনার যুক্তি, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে ভারতের দিক থেকে কোনও অস্পষ্টতা নেই। তা সামরিক মানচিত্রে স্পষ্ট দেখানো রয়েছে। যদিও ২০০২-সালে দু’দেশের বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর বৈঠকে চিন তা ফিরিয়ে দেয়।
নয়াদিল্লির দাবি, চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় হাজার দশেক সেনা, কামান ও ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট সরালে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে। অতীতে ডোকলামে ভারত-চিনের সেনা সংঘাতের অবস্থান থেকে পিছু হঠার পরে বিদেশ মন্ত্রক এ বিষয়ে সরকারি বিবৃতি দিয়েছিল। কিন্তু পূর্ব লাদাখের তিনটি জায়গা থেকে দুই সেনা কিছুটা পিছু হটলেও খাতায়-কলমে মোদী সরকার এখনও কিছু বলতে নারাজ। এখানেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। রাহুল গাঁধী বুধবার সকালে টুইট করেন, “চিনারা হেঁটে হেঁটে ঢুকে লাদাখে আমাদের ভূখণ্ড দখল করে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী একেবারে নীরব। তিনি উধাও হয়ে গিয়েছেন।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর পাল্টা বলেন, “রাহুল গাঁধীর বোঝা উচিত, এই রকম আন্তর্জাতিক বিষয়ে, যেখানে চিনের প্রশ্ন জড়িত, তা নিয়ে টুইটে প্রশ্ন তোলা যায় না।” রাহুল বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযানেরও প্রমাণ চেয়েছিলেন বলে আঙুল তুলেছেন রবিশঙ্কর। তাঁর যুক্তি, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ২০২০-র ভারত ও ১৯৬২-র ভারত এক নয়।
আরও পড়ুন: সাহায্য চেয়েও মেলেনি! শ্রমিক স্পেশালে শিশুকন্যার মৃত্যু
লাদাখের সাংসদ নামগিয়াল নিজে গত তিন দিন সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘুরছিলেন। রাহুলকে নিশানা করে তিনি বলেন, “চিন ভারতের এলাকা দখল করেছিল ঠিকই। কিন্তু সেটা কংগ্রেস জমানায়, ১৯৬২-তে। আকসাই চিন বা লাদাখের প্রায় ৩৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে চিন। তার পরে ২০০৮-এর আগে চুমুরের পরের ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত টিয়া পাংনাক ও সাবজি ভ্যালি দখল করে। ২০০৮-এ ইউপিএ জমানায় ডেমজোকের জোরাওয়ার ফোর্ট ভেঙে ২০১২-তে সেখানে নজরদারি কেন্দ্র তৈরি করে।” তবে এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে ‘সব কিছু বলা যাবে না’ জানিয়ে তাঁর যুক্তি, “ভারতের এক ইঞ্চি জমিও চিনের দখলে যাবে না।”