শিলচরের গান্ধীবাগে সেতু পেরিয়ে শহিদ স্মৃতিসৌধের পথে জনতা। — নিজস্ব চিত্র।
অসমের বঙ্গভাষী প্রধান বরাক উপত্যকার প্রতি বৈষম্য-বঞ্চনার অভিযোগ যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে ভাষা শহিদ দিবস পালনে মানুষের আগ্রহ। এ বার ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে ১৫ মে বরাক উপত্যকার তিন জেলায় শোভাযাত্রা করে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। ১৬, ১৭ মে-তেও মিছিল ছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ এবং বরাকের আওয়াজের। ১৮ মে হয় বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ‘উনিশের আবাহন’।
আজ, ১৯ মে ভাষাশহিদ দিবসে স্থানে স্থানে বার হয় ছোট-বড় শোভাযাত্রা, হয় শহিদ তর্পণ। গানে-কবিতায়-চিত্রশিল্পে এবং পত্রিকা-গ্রন্থ প্রকাশে দিনভর পালন করা হয় নানা কর্মসূচি। কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি তিন জেলাতেই এক দৃশ্য। ভাষাশহিদ স্মরণে যোগ দিতে প্রতি বছর বিভিন্ন রাজ্য থেকে ভাষাপ্রেমীরা এখানে আসেন। আসেন বাংলাদেশের বহু সাহিত্য-সংস্কৃতি সংগঠক। এ বারও নিজেদের আগ্রহে ছুটে এসেছেন লুতফর রহমান, স্বপন বিশ্বাস, বনশ্রী ডলি, সইফুল
ইসলাম প্রমুখ।
অসমে অসমিয়াই হবে রাজ্য পর্যায়ের একমাত্র সরকারি ভাষা, এ কথা বলে ১৯৬০ সালে অসম বিধানসভায় ভাষা আইন পাস হতেই বঙ্গভাষী প্রধান বরাক উপত্যকায় আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬১ সালের ১৯ মে সত্যাগ্রহে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। শিলচর রেল স্টেশনে রেললাইন অবরোধ করে
বসেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। বেলা ঠিক ২টা ৩৫ মিনিটে আচমকা গুলি চালায় পুলিশ। প্রাণ হারান এগারো জন। দশ তরুণের সঙ্গে ছিলেন কমলা ভট্টাচার্য নামে এক তরুণীও। বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, তিনিই মাতৃভাষার জন্য বিশ্বের প্রথম
মহিলা শহিদ।
বরাকের একাদশ ভাষা শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠান হয় ত্রিপুরা, কলকাতাতেও। রবিবার আগরতলায় ‘আমরা বাঙালি’ কার্যালয়ে দিনটি পালিত হয়। সেখানে দলের প্রদেশ সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্রপাল বলেন, ‘‘এ শুধু ভাষার লড়াই নয়, বরং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই।’’ কলকাতায় বিধাননগরের রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে দিনটি পালন করে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কলকাতা অধ্যায়।