পরিবেশ আইনজীবী ঋত্বিক দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
দেশের কয়লা খনি করতে গিয়ে পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সরব বাঙালি পরিবেশ আন্দোলনকারী তথা পরিবেশ আইনজীবী ঋত্বিক দত্ত। এ বারে তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশি টাকা নিয়ে দেশের উন্নয়ন আটকে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনে বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে (এফসিআরএ) মামলা দায়ের করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই পরিবেশ আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল যে, ভারতের কয়লা প্রকল্পগুলিকে নিশানা করে সেগুলির কাজে বাধা দেওয়ার জন্য ঋত্বিকের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা লিগাল ইনিশিয়েটিভ ফর ফরেস্ট এন্ড এনভায়রনমেন্ট (লাইফ) আমেরিকার ‘আর্থ জাস্টিস’ নামে একটি সংস্থার থেকে টাকা পেত।
আইনের পথে হেঁটে পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ করে ইতিমধ্যেই একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন ঋত্বিক। ২০২১ সালে পরিবেশ নিয়ে কাজের জন্য নোবেলের সমতুল্য সুইডেনের রাইট লাইভলিহুড পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অরণ্য সংরক্ষণ নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবের সঙ্গে যৌথ ভাবে একটি বইও লিখেছেন ঋত্বিক। এ হেন পরিবেশকর্মীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের এমন অভিযোগে অনেকেই বিস্মিত। যদিও পরিবেশ আন্দোলনকারীদের একটি অংশের বক্তব্য, ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই কয়লা এবং খনি প্রকল্পের নামে দেদার অরণ্য সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। বিশেষ করে কয়লাখনি বেসরকারিকরণের পরে এই ধ্বংসের মাত্রা বহু গুণ বেড়েছে। গত সাত-আট বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গৌতম আদানির হাতে দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কয়লা ব্লক নিয়ম ভেঙে তুলে দেওয়ার অভিযোগ বারবার করেছেন বিরোধীরা।
সম্প্রতি কংগ্রেস শাসিত ছত্তীসগঢ়ে ২০০০ একরের অরণ্য ধ্বংস করে আদানি সংস্থার একটি কয়লা খনিকে উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া নিয়ে ফের সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, কয়লা সঙ্কট না থাকা সত্ত্বেও আদানিদের স্বার্থে ওই বিপুল পরিমাণ অরণ্য ধ্বংস করতে সক্রিয় হয়েছে মোদী সরকার। এই অবস্থায় ঋত্বিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে কেন্দ্র সরকার এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিবিআই একই সঙ্গে বিরোধী এবং পরিবেশকর্মীদের বার্তা দিল বলে মনে করা হচ্ছে। এফআইআরে সিবিআই অভিযোগ করেছে, যে সব পরিবেশ আইনজীবী বিশ্বজুড়ে পরিবেশ ধ্বংস করে চলা কয়লা প্রকল্পগুলির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালান, তাঁদের অর্থ সাহায্য করে আমেরিকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আর্থ জাস্টিস’।
২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে ঋত্বিক এই ‘আর্থ জাস্টিসে’র কাছ থেকে ৪১ লক্ষ টাকা বিদেশি অনুদান পান। তার পরেই তিনি লাইফ প্রোপাইটরশিপ গঠন করেন এবং ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ‘আর্থ জাস্টিসে’র থেকে ২২ কোটি টাকা পেশাদারি প্রাপ্তি হিসেবে গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ করেছে সিবিআই। বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ভেঙে এই সব সংস্থা দেশে কয়লা প্রকল্পগুলির কাজের পথে বাধা দিতে সক্রিয় বলে অভিযোগ কেন্দ্রের।