চাপের মুখে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত— ফাইল চিত্র।
সচিন পাইলট-সহ বিদ্রোহী ১৯ জন কংগ্রেস বিধায়কের ‘ভাগ্য নির্ধারণ’ হবে আগামী শুক্রবার। রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার সি পি জোশীর নোটিস জারির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সচিনদের দায়ের করা আবেদনের দ্বিতীয় দিনের শুনানির পরে মঙ্গলবার হাইকোর্ট জানিয়েছে ২৪ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। হাইকোর্ট আজ বলেছে, রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ওই ১৯ বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবেন না স্পিকার।
শুনানি-পর্বের মধ্যেই রাজস্থান পুলিশের এক অফিসারের আত্মহত্যার মামলায় মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) দেবারাম সাইনিকে জেরা শুরু করেছে সিবিআই। আজ বেলা ১১টায় জয়পুরের সিবিআই দফতরে তাঁকে জেরা করা শুরু হয়। গতকাল এই মামলায় কংগ্রেস বিধায়ক তথা এশিয়ান গেমসে পদকপ্রাপ্ত অ্যাথলিট কৃষ্ণা পুনিয়াকে সিবিআই জেরা করেছিল। এদিন তাঁকে ফের তলব করা হয়েছে।
চুরু জেলার রাজগড় থানার এসএইচও (স্টেশন হাউস অফিসার) বিষ্ণুদূত বিষ্ণোই গত ২৩ মে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। বিজেপির অভিযোগ, সাইনি এবং পুনিয়া ক্রমাগত মানসিক চাপ তৈরি করাতেই তিনি আত্মহত্যা করেন। জুন মাসে গহলৌত সরকার মামলার তদন্তের ভার সিবিআইকে দেয়। বিষ্ণুদূতের সুইসাইড নোট এবং মোবাইল কললিস্ট থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণকারী ডিসকাস থ্রোয়ার পুনিয়া আজ বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমি তদন্তে সম্পূর্ণ সাহায্য করতে প্রস্তুত।’’
জোধপুর হাইকোর্টের জয়পুর বেঞ্চে শুনানি-পর্বে আজ সচিন পাইলট গোষ্ঠীর কৌঁসুলি মুকুল রোহতগি বলেন, ‘‘বিধানসভার অধিবেশন না চললে দলত্যাগ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ তোলা যায় না। এখন বিধানসভার অধিবেশন হচ্ছে না। কিন্তু স্পিকার উপযুক্ত কারণ ছাড়াই নজিরবিহীন দ্রুততায় নোটিস পাঠিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে পরিষদীয় বিধিভঙ্গ হয়েছে।’’ রাজ্যজুড়ে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পাইলট-সহ ১৯ জন বিধায়ককে নোটিসের জবাব দেওয়ার জন্য মাত্র তিনদিন সময় কেন দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রোহতগি।
আরও পড়ুন: সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল, নোটিস জারি হয় পরে, আদালতে দাবি সচিনের আইনজীবীর
স্পিকার সি পি জোশীর আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সোমবার শুনানিতে অংশ নিয়ে জানিয়েছিলেন, কোনও স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে সদস্যপদ খারিজের আবেদন এলে সংশ্লিষ্ট বিধায়কের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস পাঠাতে হয়। সংবিধানের দশম তফসিলের ২(১-এ) ধারা অনুযায়ী নোটিস পাঠিয়েছেন স্পিকার। তিনি কোনও অসাংবিধানিক পদক্ষেপ করেননি। প্রধান বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ মহান্তি এবং বিচারপতি প্রকাশ গুপ্তর বেঞ্চে সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘যদি স্পিকার সংশ্লিষ্ট বিধায়কদের বিরুদ্ধে সদস্যপদ খারিজ বা অন্য কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন তবেই আদালতে বিষয়টি নিয়ে শুনানি হতে পারে। তার আগে নয়।’’
আরও পড়ুন: চিনকে বিশ্বাস করা যায় না, আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আরও ভাবতে হবে
সচিন শিবিরের বিদ্রোহের আবহে এই সিবিআই তৎপরতায় মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত কিছুটা চাপের মুখে পড়লেন বলেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন। এরই মধ্যে আজ জয়পুরের হোটেল কংগ্রেস বিধায়কদলের বৈঠক করেন গহলৌত। দলীয় সূত্রের খবর, বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য আস্থাভোটের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে। এরই মধ্যে বিধায়ক কেনাবেচার মামলায় অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত আজ ‘হোটেল-বন্দি’ কংগ্রেস বিধায়কদের খোঁচা দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যজুড়ে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ওঁরা তখন অন্তাক্ষরী খেলছেন, ইতালিয়ান রান্না শিখছেন।’’