চন্দা কোছর।—ফাইল চিত্র।
দুর্নীতি মামলায় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে এফআইআর। তার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। বদলি করা হল তদন্তের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিবিআই) অফিসারকে।
ঋণ দুর্নীতি মামলায় সম্প্রতি আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এমডি ও সিইও চন্দা কোছর, তাঁর স্বামী দীপক কোছর ও ভিডিয়োকন কর্ণধার বেণুগোপাল ধূতের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং জালিয়াতির মামলা দায়ের হয়েছে।
ওই দুর্নীতি মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন দিল্লিতে সিবিআইয়ের ব্যাঙ্কিং ও জালিয়াতি সুরক্ষা দফতরের (বিএসএফসি) এসপি সুধাংশু ধর মিশ্র। গত ২২ জানুয়ারি এফআইআরে সই করেছিলেন তিনি। তার পরদিনই রাঁচিতে সিবিআইয়ের অর্থনৈতিক অপরাধ প্রতিরোধ দফতরে বদলি করা হয় তাঁকে। আর তাঁর জায়গায় আনা হয় মোহিত গুপ্তকে। ভিডিয়োকনের দফতর ও দীপক কোছরের অফিসে তাঁর নেতৃত্বেই হানা দেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন: লটারির নামে প্রতারণা, রাজ্য থেকে হাওয়ালাতে টাকা যাচ্ছে পাকিস্তানে, ধৃত দুই শিল্পকর্তা
তল্লাশির খবর আগেভাগে ফাঁস হয়ে যেতে পারে বলে সন্দেহ দেখা দেওয়াতেই এমন পদক্ষেপ করা হয় বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু তদন্তের দায়িত্বে থাকা অফিসারের বদলি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার জন্যই কি সরিয়ে দেওয়া হল তাঁকে? এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। আর তা জোর পেয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলির টুইটের উপর ভিত্তি করে।
চন্দা কোছর, তাঁর স্বামী ও ভিডিয়োকন কর্ণধারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হওয়ার দু ’দিন পর, ২৫ জানুয়ারি নিজের টুইটার হ্যান্ডলে সিবিআইয়ের সমালোচনায় সরব হন জেটলি। পর পর বেশ কিছু টুইটে তিনি লেখেন, ‘পেশাদারি ধাঁচে তদন্ত আর তদন্ত করতে গিয়ে অ্যাডভেঞ্চার, দু’টোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে রয়েছি। আইসিআইসিআই মামলায় কাদের নিশানা করা হচ্ছে পড়লাম। তাতে একটা কথা মাথায় এল, শেষমেষ এই মামলা থেকে কিছুই বেরিয়ে আসবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পেশাদার তদন্তকারীরা নিরীহদের নিরাপত্তা দেন। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের সাহায্যে আসল অপরাধীদের খুঁজে বের করেন। শুধুমাত্র অনুমানের উপর ভর করে হল্লা করেন না। কিন্তু আমাদের গোয়েন্দারা নিজেদের মহাশক্তিধর ভাবছেন। হঠকারি পদক্ষেপ করছেন। কিন্তু মামলাটির বিশ্বাসযোগ্যই নয়। আমাদের গোয়ন্দাদের জন্য একটা পরামর্শ, অ্যাডভেঞ্চার থেকে সরে আসুন। মহাভারতে অর্জুন যে উপদেশ পেয়েছিলেন, সেটাই মেনে চলুন। লক্ষ্যভেদ করায় মন দিন।’
আরও পড়ুন: প্রিয়ঙ্কার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তির্যক মন্তব্য সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর
শুক্রবার জেটলির মন্তব্য রিটুইট করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। অলোক বর্মাকে সরানো নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের কাজে নাগ গলানোর অভিযোগ উঠেছিল আগেই। জেটলির টুইটের পরও সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কিন্তু সরকারের তরফে তা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এক সরকারি আধিকারিক বলেন, ‘‘নিজের মতামতটুকু জানিয়েছেন জেটলি। প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে তদন্ত হয় না। অথচ আমাদের গোয়েন্দারা আইসিআইসিআই বোর্ড সদস্যদের নামও তুলে ধরেছেন এফআইআরে। এতে সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মাঝপথে আটকে যাবে। তার জেরে ব্যাঙ্কিং শিল্পে যাতে অকারণ আতঙ্ক না ছড়ায়, তা-ই নিশ্চিত করতে চেয়েছেন অরুণ জেটলি।’’