CBI

বন্ডে বিপুল চাঁদা দেওয়া ‘মেঘা’ বিদ্ধ সিবিআই-তদন্তে

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্যের (৯৬৬ কোটি টাকা) নির্বাচনী বন্ড কিনেছিল এমইআইএল। এর মধ্যে একা বিজেপিই পেয়েছিল ৫৮৪ কোটি টাকা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কিনেছিল তারা। হায়দরাবাদের সেই মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার্স লিমিটেড (এমইআইএল)-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করেছে সিবিআই।

Advertisement

সারা দেশের কুড়িটিরও বেশি রাজ্যে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের বিভিন্ন বড়সড় প্রকল্পে কাজ করেছে এমইআইএল। তবে তাদের রাতারাতি শিরোনামে উঠে আসাটা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচনী বন্ডের লেনদেন প্রকাশ্যে আসার সৌজন্যে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্যের (৯৬৬ কোটি টাকা) নির্বাচনী বন্ড কিনেছিল এমইআইএল। এর মধ্যে একা বিজেপিই পেয়েছিল ৫৮৪ কোটি টাকা। বিজেপির পরে বিআরএস (১৯৫ কোটি)। বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের দাবি, কেন্দ্রের শাসক দলকে এই বিপুল অনুদান দেওয়ার সময় থেকে দেশ জুড়ে কাজ পাওয়াও বেড়ে গিয়েছিল মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপিকে এত বেশি টাকা অনুদান আর কোনও সংস্থা দেয়নি।

গত ১১ এপ্রিল এমইআইএল-এর পাশাপাশি ন্যাশনাল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এনএমডিসি) ও এনএমডিসি আয়রন অ্যান্ড স্টিল প্লান্ট (এনআইএসপি) লিমিটেড-এর আট জন আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা মেকন লিমিটেডের দু’জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি দায়ের করে সিবিআই। অভিযোগ, আট জন আধিকারিককে ৭৮ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, ছত্তীসগঢ়ের জগদলপুরের ইস্পাত কারখানা সংক্রান্ত ৩১৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রায় ১৭৪ কোটি টাকার বিলে ছাড়পত্র আদায় করা।

Advertisement

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জুজু দেখিয়ে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে তহবিলে অনুদান টেনে আনার অভিযোগ বিজেপি শিবিরের বিরুদ্ধে আগেই তুলেছে বিরোধীরা। মনে করা হচ্ছে, সেই অভিযোগ খণ্ডন করতে শাসক শিবিরেরও হাতিয়ার হতে চলেছে সিবিআইয়ের এই নয়া মামলা। লোকসভা ভোটে অন্ধ্র-তেলঙ্গনার রাজনৈতিক বিতর্কেও এই প্রসঙ্গ উঠতে পারে জোরালো ভাবেই।

চর্চায় মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক পামিরেড্ডি পিটচি (পি পি) রেড্ডিও। হায়দরাবাদ শহরে তাঁর বাড়িটাই এখন শহরের অন্যতম দ্রষ্টব্য। কারণ সেই ‘ডায়মন্ড হাউস’ দেখতে একেবারে পলকাটা হিরের মতো। অন্ধ্রের কৃষ্ণা জেলার কৃষক পিতার পঞ্চম সন্তান রেড্ডির মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১৯,২৩০ কোটি টাকা। আর হায়দরাবাদের বালানগরে মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকার পুঁজি নিয়ে একটি শেডের নীচে শুরু করা তাঁর সংস্থার আর্থিক মূল্য এখন ফুলেফেঁপে হয়েছে ৬৭,৫০০ কোটি টাকা।

শুরুতে সংস্থার নাম ছিল মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং এন্টারপ্রাইজ়েস। পুরসভার জন্য পাইপ বানাত সেই সংস্থা। ক্রমশ রাস্তা ও ছোটখাটো পরিকাঠামো তৈরির প্রকল্পের বরাত পেতে শুরু করে রেড্ডির সংস্থা। তত দিনে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ভাইপো পি ভি কৃষ্ণ রেড্ডি। তিনি সংস্থার এমডি। পি পি রেড্ডি চেয়ারম্যান। ২০০৬ সালে সংস্থার নাম পাল্টে হয় মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার্স লিমিটেড। বড় সংস্থাগুলির সঙ্গে টক্কর দিয়ে হাইওয়ে থেকে শুরু করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো একের পর এক প্রকল্প নির্মাণের বরাত পেতে থাকে এই সংস্থা। দেশের কুড়িটিরও বেশি রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ, কুয়েতের মতো দেশেও কাজ করে তারা।

এমইআইএল দেশের মধ্যে যে বড় প্রকল্পের বরাতগুলি পেয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাশ্মীরের গান্ডেরবাল এবং কার্গিলের দ্রাসের মধ্যে সংযোগকারী জ়োজি লা সুড়ঙ্গ নির্মাণ। প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচে তৈরি এই সুড়ঙ্গের সুবাদে বছরের সব ঋতুতেই যোগাযোগ অটুট থাকবে কাশ্মীর আর কার্গিলের। মজবুত হবে সীমান্তের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এ ছাড়া তেলঙ্গানার কলেশ্বরম লিফট সেচ প্রকল্প, অন্য একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে মুম্বই-আমদাবাদ বুলেট ট্রেনের বান্দ্রা-কুর্লা কমপ্লেক্স স্টেশন তৈরির বরাতও পেয়েছে এমইআইএল।

‘হিরের ঘরের’ বাসিন্দার এ হেন সংস্থাকেই এখন বিঁধল সিবিআইয়ের তদন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement