CBI

Opposition Alliance: বিরোধী ঐক্য মজবুত করছে সিবিআই-ইডি

সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর বিরুদ্ধে বুধবার সকালেই সনিয়া গান্ধী লোকসভায় দলের সাংসদদের সঙ্গে ওয়েলে নেমেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২২ ০৬:২০
Share:

ন্যাশনাল হেরাল্ডের সদর দফতর সিল করে দিল ইডি। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি পিটিআই।

বুধবার বিকেলে আচমকাই আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দফতরের সামনে দিল্লি পুলিশের বাহিনী মোতায়েন করা হল। পাশেই দশ জনপথে সনিয়া গান্ধীর বাড়ি। তার সামনেও খাকি উর্দির পুলিশ। কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা কিছু বোঝার আগেই আকবর রোডের ওই অংশ ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে বন্ধ করে দেওয়া হল। কিছু দূরে তুঘলক লেনে রাহুল গান্ধীর বাসভবন। রাহুল কর্নাটকে। তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তাও ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হল।

Advertisement

কেন এই নিরাপত্তার বহর?

কিছু ক্ষণের মধ্যেই জানা গেল, ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এর দফতর ইডি ‘সিল’ করে দিয়েছে। এই মামলায় সনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে মঙ্গলবার সারা দিন ইডি এই দফতরে তল্লাশি চালিয়েছিল। আজ ইডি-র তরফে সেখানে নোটিস ঝুলিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের অনুমতি ছাড়া যেন এই অফিস খোলা না হয়। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কংগ্রেস বিক্ষোভ দেখাতে পারে ভেবেই আগাম ঘেরাটোপ তৈরি করে পাহারার বন্দোবস্ত। আবার শুক্রবার মুল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে কংগ্রেস যে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছে, তা ঠেকাতেও আগাম এই বন্দোবস্ত বলে কেউ কেউ মনে করছেন। কর্নাটক থেকে এ দিন রাতেই বাড়ি ফেরার কথা রাহুলের। তাঁর বাড়ি ঢুকতে অসুবিধা হতে পারে কিনা দেখতে পি চিদম্বরমের নেতৃত্ব এক দল নেতা এ দিন বিকেলে রাহুলের বাড়ি ঘুরে আসেন।

Advertisement

সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর বিরুদ্ধে বুধবার সকালেই সনিয়া গান্ধী লোকসভায় দলের সাংসদদের সঙ্গে ওয়েলে নেমেছিলেন। বিরোধীরা স্লোগান তুলেছিলেন, ‘ইডি সরকার, শেম, শেম’, ‘ইডি, মোদী, ডাউন, ডাউন’! ঠিক তার পরেই ইডি ন্যাশনাল হেরাল্ডের দফতর ‘সিল’ করে দেওয়ায় ফের কংগ্রেস মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “কংগ্রেস এখন অবরুদ্ধ। দিল্লি পুলিশ আমাদের সদর দফতর, সভানেত্রী, প্রাক্তন সভাপতির বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। তবে আমাদের মুখ বন্ধ করা যাবে না।” কংগ্রেস নেতা অশোক গহলৌত একে ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা’ আখ্যা দিয়েছেন।

আজ ইডি-র যথেচ্ছ ক্ষমতায় সিলমোহর দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনায় ১৭টি রাজনৈতিক দল এক সঙ্গে বিবৃতি দিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশা করছি, এই বিপজ্জনক রায়ের আয়ু দ্রুত ফুরোবে এবং সাংবিধানিক ব্যবস্থা কায়েম হবে।’ বিরোধী জোটের ফাটল ঢেকে এই বিবৃতিটিতে তৃণমূল কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টিও সই করেছে। বিরোধীরা এ বার রাষ্ট্রপতির কাছেও দরবার করার জন্য সময় চেয়েছেন।

দু’দিন আগেই ইডি শিবসেনার রাজ্যসভার নেতা সঞ্জয় রাউতকে গ্রেফতার করেছে। রাজ্যসভাতেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। তার আগে লোকসভায় সনিয়া কংগ্রেস, ডিএমকে সাংসদদের সঙ্গে ওয়েলে নেমেছেন। প্রতিবাদে তৃণমূল, এনসিপি-ও যোগ দিয়েছে। বিরোধীদের এ বিষয়ে বলতে না দেওয়ায় ডিএমকের কানিমোঝি কংগ্রেসের শশী তারুর, কার্তি চিদম্বরমকে ওয়েলে নামতে বলেন। সনিয়া নিজেই ওয়েলে গিয়ে প্রতিবাদে যোগ দেন। রাজ্যসভায় মল্লিকার্জুন খড়্গে মোদী সরকারের সমালোচনা করার পরে শিবসেনার প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী প্রশ্ন তুলেছেন, রাউতকে গ্রেফতারের খবর ইডি রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে জানায়নি কেন?

সব মিলিয়ে, ছত্রভঙ্গ বিরোধীদের এককাট্টা করতে সিবিআই-ইডি আঠার ভূমিকা পালন করছে বলে রাজনীতিকেরা মনে করছেন। রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের মধ্যে যে ঐক্য দেখা যায়নি, ইডি-র যথেচ্ছ ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিবৃতি জারিতে সেই ঐক্য দেখা গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে ফাটল তৈরি হয়েছিল। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী বাছাইয়ে তেমনই তৃণমূল ও আম আদমি পার্টি হাজির থাকেনি। আপ আজ মার্গারেট আলভাকে সমর্থন জানালেও তৃণমূল এখনও ভোটদানে বিরত থাকার অবস্থানে। সংসদের বাদল অধিবেশনে ইডি-র অপব্যবহার নিয়ে তৃণমূল তেমন ভাবে বাকি বিরোধীদের পাশে ছিল না। কিন্তু এই বিবৃতি তৈরিতে তৃণমূলই উদ্যোগী হয়েছে। তৃণমূলের জোরাজুরিতেই আম আদমি পার্টি বিবৃতিতে সই করেছে। সব মিলিয়ে ১৭টি দলের নেতা ও নির্দল সাংসদ কপিল সিব্বল এই বিবৃতিতে সই করেছেন। কংগ্রেসের বক্তব্য, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে তৈরি ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এর দফতর সিল করে ইডি নিজের মাত্রাছাড়া ক্ষমতাকেই কাজে লাগাচ্ছে।

‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এর দফতর সিল করা নিয়ে ইডি সূত্রের বক্তব্য, মঙ্গলবার ওই দফতরে তল্লাশি চালানোর পরে বুধবার সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তল্লাশি শেষ হয়নি বলেই ইডি-র অনুমতি ছাড়া দফতর খুলতে বারণ করে ইডি-র অতিরিক্ত ডিরেক্টর কুলদীপ সিংহের তরফে নোটিস ঝোলানো হয়েছে। ইডি সূত্রের অভিযোগ, সনিয়া-রাহুলের মালিকানাধীন সংস্থা ইয়ং ইন্ডিয়া ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এর প্রকাশনা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস-এর ৮০০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করেছে। এর ফলে সনিয়া-রাহুল ৪১৪.৪০ কোটি টাকার মূল্যের সম্পত্তির মালিকানা পেয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement