ফলের রস খেয়ে অনশন ভাঙছেন উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। শনিবার। — শীর্ষেন্দু সী
কংগ্রেস বিধায়কের চাপের মুখে গত রাত থেকেই জেলার চা-বাগানগুলিতে শুরু হল শ্রমিকদের নগদ টাকা দেওয়ার কাজ। সেই কাজ শুরু হতেই মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থর
অনশন প্রত্যাহারের জন্য বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। শেষ পর্যন্ত আজ ফলের রস খেয়ে অনশন প্রত্যাহার করেন কমলাক্ষ। তবে তাঁর ‘আমরণ অনশন’ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
ক্যাশলেসের নামে বাগান শ্রমিকদের হয়রানি গত কয়েক সপ্তাহে চরমে ওঠে। উত্তর করিমগঞ্জের চারটি বাগান শ্রমিকদের তলব বা মজুরি বন্ধ হয়ে যায়। না খেয়ে মরার উপক্রম হয় বাগান শ্রমিকদের। অথচ বাগানে নেই কোনও নেট পরিষেবা। ফলে কোনও ভাবেই ব্যাঙ্কের কর্মীরা তলবের টাকা দিতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেও তাঁদের টনক নাড়াতে পারেননি কংগ্রেস বিধায়ক। বাধ্য হয়ে তিনি আমরণ অনশনের পথই বেছে নেন।
গত কাল থেকে করিমগঞ্জের ধর্না শেডে অনশনে বসেন বিধায়ক। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চারটি বাগানে ধর্নায় বসেন শ্রমিকরাও। প্রায় ন’ঘণ্টা অনশনের পর খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়েন কমলাক্ষবাবু। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের ডেকে আনা হয়। তাঁদের পরামর্শে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিধায়ক জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত না বাগান শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি অনশন প্রত্যাহার করবেন না। ফলে হাসপাতালেও তাঁকে কিছু খাওয়ানো যায়নি। আজ সকালে অসম বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়ার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বিধায়ককে অনশন প্রত্যাহার করাতে বিরোধী দলনেতাকে অনুরোধ করেন বলে কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, অসমের মুখ্যসচিব ভি কে পিপারসেনিয়া করিমগঞ্জের জেলাশাসকের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। বিধায়ক অনশন শুরু করার পর গত কাল রাতেই উত্তর করিমগঞ্জ বিধানসভার প্রমোদনগর চা বাগানে নগদ টাকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়। ভারপ্রাপ্ত জেলাশাসক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক নবারুণ ভট্টাচার্য বিধায়ককে আশ্বস্ত করে বলেন, বাকি বাগানগুলিতেও সোমবার থেকে নগদে মজুরি দেওয়ার কাজ শুরু হবে। যতদিন পর্যন্ত মোবাইলের নেট পরিষেবা উন্নত না হচ্ছে ততদিন এ ভাবেই চালানো হবে বলে আশ্বাস দিলে বিধায়ক অনশন প্রত্যাহার করেন। করিমগঞ্জের সদর সার্কেল অফিসার হোমেন গোঁহাই বরুয়া ফলের রস খাইয়ে তাঁর অনশন প্রত্যাহার করান।
এদিকে কমলাক্ষর অনশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে করিমগঞ্জ জেলা বিজেপি। বিজেপির বক্তব্য, ২২ তারিখ নাকি জেলার প্রায় সব বাগান শ্রমিকের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাতে গোনা দু-চারটি বাগানের টাকা দেওয়া বাকি ছিল। উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক ২৩ ডিসেম্বর অনশন করে শুধুমাত্র রাজনীতি করেছেন বলে সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেন জেলা বিজেপি সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিধায়ক অনশন করতে চাইলে তা আগেই করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে টাকা দেওয়ার কাজ শুরু হওয়ার পর কেন অনশনে বসলেন?’’ কংগ্রেসের পাল্টা বক্তব্য, বিধায়ক অনশন শুরু করার পরই গত কাল রাতে প্রমোদনগর বাগানের শ্রমিকদের তলবের টাকা নগদ দেওয়া হয়েছে। যা তাদের আন্দোলনের সাফল্য।