স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল ছবি।
কানাডায় খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপরে আক্রমণের নেপথ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত রয়েছে বলে তিনিই নিশ্চিত করেছিলেন আমেরিকান সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর সাংবাদিককে। কানাডার পার্লামেন্টের কমিটির সামনে সে দেশের উপবিদেশমন্ত্রী ডেভিড মরিসনের এমন বিস্ফোরক স্বীকারোক্তির পরে মুখ খুলল ওয়াশিংটন। আমেরিকান বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, ‘‘এমন অভিযোগ উদ্বেগজনক। এ নিয়ে কানাডা সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব।’’ নয়াদিল্লি সরকারি বিবৃতি না দিলেও সাউথ ব্লক সূত্র জানিয়েছে, অত্যন্ত দুর্বল ও ধোঁয়াটে তথ্য হাতে নিয়ে এমন অভিযোগ তুলছে কানাডা।
‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ সম্প্রতি লেখে, কানাডায় খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং তাদের উপরে হামলা চালানোর ছাড়পত্র দিয়েছিলেন ‘ভারতের এক শীর্ষস্থানীয় পদাধিকারী’। সংবাদপত্রটি দাবি করে যে, অমিত শাহই সেই পদাধিকারী বলে ‘কানাডার একটি সূত্র’ তাদের নিশ্চিত করেছে। উপবিদেশমন্ত্রী মরিসন স্বীকার করেছেন, তিনিই সেই সূত্র। মঙ্গলবার কানাডার পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সের জনসুরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির শুনানিতে তিনি বলেন, ‘‘এক সাংবাদিক আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন, ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির কথাই বলা হচ্ছে কি না। আমি বলি, ‘হ্যাঁ, তিনিই’। যদিও কোন প্রমাণের ভিত্তিতে শাহের বিরুদ্ধে ট্রুডোর সরকার এমন মারাত্মক অভিযোগ তুলছে, তা স্পষ্ট করেননি মরিসন। তবে বলেছেন, যেচে নয়, তিনি সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মাত্র।
ওই কমিটিতে হাজিরা দিয়েছিলেন কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ন্যাথালি ড্রউইন-ও। তিনি বলেন, এই তথ্য প্রকাশ করতে ট্রুডোর ছাড়পত্র নেওয়ার দরকার ছিল না তাঁর। ভারতের ছড়ানো ভুল তথ্যের মোকাবিলা করার লক্ষ্যেই ওয়াশিংটন পোস্টকে খবরটি দেওয়া হয়েছে। বড়সড় কোনও সংবাদমাধ্যমকে এর সঙ্গে জড়িয়ে নেওয়া তাঁদেরই কৌশলগত পদক্ষেপ। তবে পার্লামেন্টকে অন্ধকারে রেখে আমেরিকান সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার জন্য ট্রুডো সরকারের সমালোচনা করেন বিরোধী কনজ়ারভেটিভ এমপি রেকেল ড্যাঞ্চো।
ভারতের বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই প্রসঙ্গে কোনও সরকারি বিবৃতি দেয়নি। তবে সাউথ ব্লক সূত্রকে প্রশ্ন করা হলে বলা হয়েছে, ‘যে তথ্যের ভিত্তিতে কোনও প্রমাণ ছাড়াই এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুর্বল, ধোঁয়াটে। এ হল প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ডুবে যাওয়া রাজনৈতিক নৌকা ভাসিয়ে তোলার আরও একটা চেষ্টা।’ সাম্প্রতিক টানাপড়েনে কানাডা থেকে হাই-কমিশনার সঞ্জয়কুমার বর্মা ও আরও পাঁচ কূটনীতিককে ফিরিয়ে এনেছে নয়াদিল্লি। সে দেশের একটি বেসরকারি চ্যানেলকে সঞ্জয় বলেছিলেন, ‘‘কোনও দেশের বিরুদ্ধে তথ্য থাকলে তা আগে তাদেরই জানানো উচিত। কিন্তু এক জন (ট্রুডো) সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে প্রমাণ ছাড়াই কথা বলে যাবেন। উনি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন, যাতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শুধুই অবনতির পথে যায়।’’
বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যন স্বামী অবশ্য এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। হয় মোদী খোলাখুলি শাহকে আড়াল করুন, অথবা বিজেপি শাহকে বলুক, আদালত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি না দেওয়া পর্যন্ত তিনি যেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেন।’