বিধানসভায় যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
কথায় কাজ না হলে গুলি চলবে, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাহিন বাগের উদ্দেশে এমনই ‘জ্বালাময়ী’ ভাষণ দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ফের বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন তিনি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষাভ সামাল দিতে গিয়ে তাঁর পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বিচারে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগের সাফাই দিতে গিয়ে যোগী বললেন, মরবার জন্য যদি কেউ রাস্তায় নামে, তাহলে বেঁচে ফিরবে কীভাবে?
সংসদে কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ পাশ করালে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বিক্ষোভের আগুনে তেতে ওঠে গোটা উত্তরপ্রদেশ। তাতে কমপক্ষে ২০ জন প্রাণ হারান। পুলিশের গুলিতেই আন্দোলনকারীদের মৃত্যু হয় বলে সেইসময় অভিযোগ ওঠে। সেই সংক্রান্ত নানা ভিডিয়ো ফুটেজও সামনে আসে। এমনকি সংবাদমাধ্যমে মিছিলে গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেন বিজনৌরের পুলিশ সুপার সঞ্জীব ত্যাগীও।
গোট ঘটনায় শুরু থেকেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। সরকারের নির্দেশেই আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ গুলি চালায় বলে অভিযোগ করেন সমাজকর্মীরাও। বুধবার বিধানসভার অধিবেশন শুরু হলে, সেই প্রসঙ্গ তুলে যোগী সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: কোথায় ছিলেন মমতা, খোঁজ রাখতেন তাপসের? তীব্র আক্রমণে বিজেপি-বাম-কংগ্রেস
তাতেই চটে ওঠেন যোগী। তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি মরবার জন্য আসে, তাহলে বাঁচবে কীভাবে? অযোধ্যায় রামভক্তদের উপর গুলি চালিয়ে এই পুণ্যভূমিকে একসময় কলুষিত করার চেষ্টা করেছিল যারা, উপদ্রবকারীদের উপর পদক্ষেপ করায় আজ তারাই জবাবদিহি করছে।’’
পুলিশের গুলিতে কারও মৃত্যু হয়নি বলেও দাবি করেন যোগী। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি। বরং দাঙ্গাবাজদের গুলিতেই প্রাণহানি হয়েছে। কেউ যদি গুলি চালানোর লক্ষ্য নিয়েই রাস্তায় নামে, হয় সে মরবে, নইলে পুলিশ মরবে।’’
এর আগে, দিল্লিতে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে শাহিন বাগকে নিশানা করেছিলেন যোগী। কথায় কাজ না হলে গুলি চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এ দিন ফের বিক্ষোভকারীদের তীব্র কটাক্ষ করেন তিনি। যোগী বলেন, ‘‘আজাদির স্লোগান উঠছে। কি সের আজাদি? জিন্নার স্বপ্ন পূরণের পথে এগোব আমরা, নাকি গাঁধীর দেখানো পথে? ডিসেম্বরে যা হয়েছে, তাতে পুলিশের কাজের প্রশংসা করা উচিত।’’
আরও পড়ুন: তাপস পাল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, তোপ দাগলেন মমতা
তাঁর সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে নয়, তবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করলে কড়া পদক্ষেপ করতে পিছু হটবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন যোগী। তাঁর কথায়, ‘‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনে চিরকাল সমর্থন করে এসেছি আমি। কিন্তু গণতন্ত্রের পিছনে মুখ লুকিয়ে কেউ যদি পরিবেশ দূষিত করে তোলে, যদি হিংসা ছড়ায়, সে ক্ষেত্রে সে যে ভাষা বোঝে, সেই ভাষাতেই বোঝানো হবে তাকে।’’
তবে যোগী আদিত্যনাথ একা নন, সিএএ বিরোধীদের নিয়ে গত দু’মাসে একাধিক বিজেপি নেতাকে এমন বিতর্কিত মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে। বাংলায় সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ চরম আখার ধারণ করলে দিলীপ ঘোষ বলেন, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসকারীদের গুলি করে মারবে। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনী প্রচারে সময় একই সুরে স্লোগান দিতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকেও। শাহিন বাগকে নিশানা করে দেশদ্রোহীদের গুলি করে মারার নিদান দেন তিনি।