Arvind Kejriwal

জেলে বসেই কি দিল্লির সরকার চালাবেন কেজরীওয়াল? কী বলছে নিয়ম?

জেলের ভিতর থেকে প্রশাসন চালানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে বাইরে তো বটেই, আপের একাংশের ভিতরেও সংশয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জেলে কী বিধি মানা হয়, সেই বিষয়েও একটা অস্পষ্টতা রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪ ১৭:০৬
Share:

অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র

দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে ইডির হাতে গ্রেফতার হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। তবে গ্রেফতার হলেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি আপ প্রধান। বরং কেজরীর দলের তরফে জানানো হয়, কেজরীই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। দেশের ইতিহাসে কেজরীওয়ালই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হলেন। কিছু দিন আগে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেফতার করে ইডি। জমি দুর্নীতি মামলায় তাঁকে গত ৩১ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয়। তবে গ্রেফতার হওয়ার আগে হেমন্ত রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের কাছে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তার পর ইডি তাঁকে গ্রেফতার করে। ফলে কেজরীওয়ালের মতো মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকাকালীন হেমন্ত গ্রেফতার হননি।

Advertisement

১৯৯৭ বিহারের ট্রেজারি এবং বিভিন্ন দফতরে অনিয়ম সংক্রান্ত মামলায় (যে মামলার সূত্রে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে) গ্রেফতারির আগে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন আরজেডির লালুপ্রসাদ যাদব। একই ভাবে ২০১৪ সালে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ইস্তফা দিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী, অধুনা প্রয়াত এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা।

কিন্তু জেলের ভিতর থেকে প্রশাসন চালানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে বাইরে তো বটেই, আপের একাংশের ভিতরেও সংশয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জেলে কী বিধি মানা হয়, সেই বিষয়েও একটা অস্পষ্টতা রয়েছে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে জেলে যাওয়ার দৃষ্টান্ত অতীতে না থাকায়, এমন সুনির্দিষ্ট কোনও বিধিও নেই, যেখানে কাউকে জেল থেকে প্রশাসন পরিচালনায় বাধা দেওয়া হবে। এর আগে দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলাতেই গ্রেফতার হয়েছেন আপ নেতা মণীশ সিসৌদিয়া এবং সঞ্জয় সিংহ। তাঁরা দু’জনেই বর্তমানে তিহাড় জেলে বন্দি। কেজরীওয়ালের মতো ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিকেও তিহাড়ে রাখা হতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই তিহাড় জেলের প্রাক্তন আইন বিষয়ক আধিকারিক সুনীল গুপ্ত এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, জেল থেকে প্রশাসন পরিচালনা করা বেশ কঠিন কাজ। এ ক্ষেত্রে একাধিক অসুবিধার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

Advertisement

জেলের ভিতর এক জন বন্দিকে কী কী নিয়মবিধি মেনে চলতে হয়, সে কথা উল্লেখ করে তিনি ‘এনডিটিভি’-কে বলেন, “জেল থেকে সরকার চালানো সহজ কাজ নয়। কারণ, জেলের নিয়ম অনুযায়ী এক জন বন্দি সপ্তাহে দু’বার পরিবার পরিজন, বন্ধু এবং অন্যদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।” এই শর্ত মেনে মুখ্যমন্ত্রিত্বের গুরুভার সামলানো যে বেশ কঠিন, সেটি স্পষ্ট করে তিহাড়ের প্রাক্তন ওই আধিকারিক। অসুবিধার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, এক জন প্রশাসনিক প্রধানকে বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক বৈঠক করতে হয়, অধস্তন আধিকারিক এবং প্রশাসনিক কর্তাদের কাজ সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে হয়। জেলে থেকে যা করা কার্যত অসম্ভব।

তবে কেজরীওয়ালের জন্য একটি মুশকিল আসানের উপায়ও জানিয়েছেন তিহাড়ের প্রাক্তন আধিকারিক। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদাধিকার বলে যে কোনও বাড়িকে জেল বা সংশোধনাগার বলে ঘোষণা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কেজরীওয়াল লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনার কাছে এই বিষয়ে আর্জি জানালে এবং তা মঞ্জুর করা হলে নিজের বাসভবন থেকেই প্রশাসন চালাতে পারবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।

তবে এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। তা হল কেজরীর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। কেজরীওয়াল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা যে স্বাধীন ক্ষমতা ভোগ করেন, দিল্লি কিংবা পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রীর তা নেই। তা ছাড়া দিল্লিতে কেজরীওয়াল এবং কেন্দ্রের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট গভর্নরের মধ্যে ক্ষমতার টানাপড়েন নতুন নয়। গত বছর দিল্লির আমলাদের নিয়োগ এবং বদলির রাশ কার হাতে থাকবে— এই নিয়ে জল গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। গত ১১ মে শীর্ষ আদালতের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মত ভাবে জানিয়েছিল, আমলাদের রদবদল থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের। তবে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা এবং ভূমি দফতর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতেই থাকবে বলে জানানো হয়।

গত ১৯ মে আদালতের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে অধ্যাদেশ জারি করে মোদী সরকার। অধ্যাদেশে বলা হয়, জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। আমলাদের নিয়োগ এবং বদলির ব্যাপারে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আপ-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করে যে, নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা খর্ব করতে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকেও উপেক্ষা করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তা ছাড়া আপ সরকারের যে আবগারি নীতি নিয়ে এত বিতর্ক, এত অভিযোগ, সেই বিষয়ে প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর সাক্সেনাই। দিল্লিতে আপ সরকারের আমলে আবগারি নীতি বদলে ফেলে কয়েকটি সংস্থাকে বেআইনি ভাবে সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। গত বছরই বিতর্কিত এই আবগারি নীতি বাতিল করার কথা ঘোষণা করে দিল্লির আপ সরকার। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৯ বার তলব করা হয়েছিল কেজরীকে। কিন্তু প্রতি বারই হাজিরা এড়ান তিনি। বৃহস্পতিবার আবগারি মামলাতেই কেজরীকে গ্রেফতার করে ইডি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement