জয়রাম রমেশ। —ফাইল চিত্র।
আয়ুষ্মান ভারত, ভারতমালা পরিযোজনা ও দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে বড় মাপের অনিয়ম নিয়ে সিএজি-র রিপোর্ট অস্বস্তিতে ফেলেছিল মোদী সরকারকে। তার জেরে সিএজি বা কন্ট্রোলার ও অডিটর জেনারেলের তিন অফিসারকেই বদলি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল।
কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছে, মোদী সরকার ‘মাফিয়াদের স্টাইল’-এ নীরবে ভয় দেখানোর কাজ করছে। আম আদমি পার্টিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর সাহস থাকলে অফিসারদের বদলি করার বদলে দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দিন।
ইউপিএ জমানায় টু-জি স্পেকট্রাম, কয়লা খনি বন্টন, কমনওয়েলথ গেমস নিয়ে একের পর এক সিএজি রিপোর্ট মনমোহন সিংহের সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছিল। মোদী জমানায় এই প্রথম সিএজি রিপোর্ট বিরোধীদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সিএজি-র শীর্ষপদে প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন, গুজরাতের অফিসার গিরিশচন্দ্র মুর্মু থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে এই রিপোর্ট প্রকাশ হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এর পরেই সিএজি-র তিন অফিসারকে বদলি করে দেওয়া হয়। ভারতমালা পরিযোজনা নিয়ে রিপোর্টের ভারপ্রাপ্ত অতূর্বা সিনহাকে দিল্লিতে প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর, অডিট, ইনফ্রাস্ট্রাকচারের পদ থেকে কেরলের তিরুবনন্তপুরমের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল পদে বদলি করা হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে সিএজি রিপোর্টের ভারপ্রাপ্ত ডিজি, অডিট, সেন্ট্রাল এক্সপেন্ডিচার দত্তপ্রসাদ সূর্যকান্ত শিরসতকে ডিরেক্টর (লিগাল) পদে বদলি করা হয়। ওই হিসেব পরীক্ষার কাজ যিনি শুরু করেছিলেন, সেই অশোক সিনহাকে ডিজি (নর্থ সেন্ট্রাল)-এর পদ থেকে ডিজি (রাজভাষা) পদে বদলি করা হয়েছে।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ আজ বলেন, ‘‘মোদী সরকার মাফিয়া স্টাইলে নীরবে ভয় দেখানোর কাজ করে। কেউ দুর্নীতি ফাঁস করলে তাঁকে ভয় দেখানো হয় বা সরিয়ে দেওয়া হয়। তিন সিএজি অফিসার এর নতুন শিকার। আমাদের দাবি, এঁদের বদলি বাতিল করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’ ইউপিএ জমানায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে রাজনীতিতে উঠে আসা অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি আজ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘এ বার নরেন্দ্র মোদীর আসল চেহারা দেশের সামনে বেরিয়ে পড়েছে। দুর্নীতিমুক্ত ভারতের ফাঁপা প্রতিশ্রুতি দেওয়া বিজেপি দুর্নীতিকে কোলে বসিয়ে রেখেছে।’’
দু’মাস আগে সিএজি রিপোর্ট মোদী সরকারের সাতটি ক্ষেত্রে অনিয়মের দিকে আঙুল তুলেছিল। এর মধ্যে সবথেকে বেশি হইচই হয়েছিল ভারতমালা পরিযোজনা, দিল্লির দ্বারকা থেকে গুরুগ্রামের মধ্যে দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে ও আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা নিয়ে। সিএজি তার রিপোর্টে বলেছিল, নিতিন গডকড়ীর সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের ভারতমালা পরিযোজনা-য় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ৩৪ হাজার কিলোমিটার সড়ক তৈরি করতে ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু প্রায় ৮ লক্ষ ৪৬ হাজার কোটি টাকায় ২৬ হাজার কিলোমিটার সড়ক তৈরির বরাত দেওয়া হয়। বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়াতেই অনিয়ম রয়েছে। দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির জন্য প্রতি কিলোমিটারে ১৮ কোটি টাকা অনুমোদিত খরচের বদলে প্রতি কিলোমিটারে ২৫০ কোটি টাকা খরচের বরাত দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, ১৪০০ শতাংশ খরচ বেড়েছে। আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় একটি মোবাইল নম্বরের সঙ্গে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ মানুষের নাম যুক্ত করা হয়েছে। মৃতদের নামেও স্বাস্থ্য বিমায় চিকিৎসার অর্থ বরাদ্দ হয়েছে বলেও রিপোর্টে দাবি।