সিএএ-র সমর্থন। ফাইল চিত্র।
এ যেন ‘হাজার হাজার ডক্টর হাজরা’! তবে উদ্দেশ্যটা কী?
নতুন নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থন চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইটারে একটি নম্বর শেয়ার করার পরেই এই নানা রূপের আবির্ভাব। অমিত জানান, ওই নম্বরে মিসড কল দিলেই এই আইনের পক্ষে সমর্থন নথিভুক্ত হবে। বিজেপির তরফেও ওই নম্বর প্রচার করা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই একই নম্বর থেকে একাকিত্ব কাটাতে বন্ধুত্ব-যৌনতার আমন্ত্রণ, নিখরচায় বিনোদন অ্যাপের সাবস্ক্রিপশন, এমনকি চাকরির প্রস্তাব দিয়ে বলা হচ্ছে ওই নম্বরে ফোন করতে। টুইটারেই সিএএ-বিরোধী অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, ভুয়ো পরিচয়ে সিএএ-র পক্ষে বিপুল সমর্থন জোগাড় করতেই এমন কৌশল নিয়েছে বিজেপির আইটি সেল। অর্থাৎ সম্পূর্ণ অন্য কারণে ওই নম্বরে কেউ মিসড কল দিলে তা সিএএ-র পক্ষেই যাবে। হু হু করে বাড়বে সিএএপন্থী সমর্থকের সংখ্যা।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে দিল্লিতে বিজেপি সূ্ত্রে বলা হয়েছে, কারা ওই প্রচার চালাচ্ছে, তা তদন্তসাপেক্ষ। বিরোধীরাও ওই কাজ করে থাকতে পারে। একই সঙ্গে অবশ্য দলের তরফে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, অনেক সময়ে উৎসাহী সমর্থকেরা দলের লক্ষণরেখার বাইরে গিয়ে কাজ করে ফেলে। যা অনুচিত। তবে সিএএ-র বিরুদ্ধে যে ভাবে বিরোধীরা পথে নেমেছেন, তাতে অস্বস্তিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। যার মোকাবিলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিষয়টি বোঝানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির আইটি সেলের সহ আহ্বায়ক জয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমরা দলের তরফে ওই নম্বর প্রকাশ করেছি। কোনও ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে ওই নম্বরে প্রচার টানার চেষ্টা দলের তরফে করা হয়নি। দলের কোনও কর্মী বা সমর্থক সিএএ-র পক্ষে জনমত সংগ্রহের জন্য এমন করে থাকলে দল দায় নিয়ে পারবে না।’’ রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘এটা আইনের চোখে প্রতারণা। প্রশাসনের তরফে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হবে।’’
অমিত শুক্রবার নম্বরটি শেয়ার করার পর শনিবারই টুইটারে দেখা যায়, ওই একই নম্বর থেকে আসছে নানা রকম প্রস্তাব। শর্ত একটাই, ওই নম্বরে ফোন করতে হবে। যেমন মহিলার ছবি দেওয়া একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই নম্বর দিয়ে ‘বন্ধুত্বের’ প্রস্তাব দেওয়া হয়। কোনওটি থেকে লেখা হয়, ‘‘কেউ আমাকে ভালবাসতে চাইলে বা ডেটে যেতে চাইলে ফোন করুন।’’ আর একটি থেকে লেখা হয়, ‘‘বোর হচ্ছি। কথা বলতে চাই। এই নম্বরে মিসড কল করুন।’’ আর একটি আরও সোজাসাপ্টা, ‘‘তুমি কি একা? আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে? ফোন করো এই নম্বরে।’’ কোনও টুইটার হ্যান্ডল থেকে আবার সরাসরি যৌনতার আমন্ত্রণ জানানো হয় ওই নম্বর দিয়েই!
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ‘অফারের’ একটি। পাশেই শাহের টুইট।
দামি ঘড়ি, আইফোন, বিনোদন অ্যাপের সাবস্ক্রিপশনের অফারও দেওয়া হয় একই নম্বর থেকে। একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করা হয়, ‘‘ছ’মাসের নেটফ্লিক্স সাবস্ক্রিপশন চাই? এই নম্বরে ফোন করুন। এই সুযোগ কেবল প্রথম ১০০ জনের জন্য। নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করুন।’’ কোথাও আবার নেটফ্লিক্সের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে নিখরচায় হাজার জিবি ডেটা অথবা অ্যামাজন প্রাইম, হটস্টারের সাবস্ক্রিপশনের প্রলোভনও। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়া তাদের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে জানায় যে এমন অফারের খবর একেবারেই মিথ্যে।
সিএএ-বিরোধীদের দাবি, যে কোনও উপায়ে জনসমর্থন টানতেই বিজেপি এই রাস্তা নিয়েছে। তাঁদের দাবি, সম্প্রতি #ইন্ডিয়াসাপোর্টসসিএএ— এই হ্যাশট্যাগে কার্যত গণভোটের ঢংয়ে টুইটারে সমর্থন চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর আর্জি রিটুইট করে আসরে নেমেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু বিরুদ্ধ স্বর হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা আসে #ইন্ডিয়াডাজ়নটসাপোর্টসিএএ-সহ বেশ কয়েকটি হ্যাশট্যাগ। অনেক সময়ই তা ছাপিয়ে গিয়েছে সরকারি প্রচারকে। প্রকাশ্যে ‘গণভোটে’ হেরেই মরিয়া বিজেপি এই কৌশল নিয়েছে বলে সিএএ-বিরোধীদের দাবি। বিজেপি অস্বীকার করেছে। ঘটনাচক্রে, বিজেপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ছড়াতেই নতুন কিছু টুইট নজরে আসে। একই নম্বর ছড়িয়ে বলা হয়, ‘‘সিএএ-র বিরুদ্ধে মত জানাতে এই নম্বরে মিসড কল দিন।’’ একটি হ্যান্ডল থেকে বলা হয়, যারা রাহুল গাঁধীকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান, তারা মিসড কল দিন। বিরোধীদের দাবি, তাদের ঘাড়ে দায় ঠেলে দেওয়ার জন্য এ এক কৌশল।