কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংহ এবং সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। —ফাইল চিত্র
নেতা-বিতর্কে সেনাপ্রধানের পাশে দাঁড়ালেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংহ। সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের মন্তব্যে ‘কোনও রাজনীতি দেখছি না’, জানালেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী ভি কে সিংহ। প্রসঙ্গ না বুঝেই সংবাদ মাধ্যম এবং বিরোধীরা এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। একই সঙ্গে বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘ফুটবল খেললেও বিরোধীরা বলবেন, রাজনীতি করছি।’’
আগামী ৩১ ডিসেম্বর সেনাপ্রধানের পদ থেকে অবসর নেবেন বিপিন রাওয়াত। তবে কয়েক দিন আগেই তিন বাহিনীর প্রধান হিসেবে ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি করেছে কেন্দ্র। সেই পদে বিপিন রাওয়াতের নাম নিয়ে জল্পনায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের মূল কথা ছিল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা অগ্নিসংযোগ ও হিংসা ছড়াচ্ছেন। এটা কখনও নেতৃত্ব হতে পারে না। যাঁরা মানুষকে ভুল পথে চালিত করেন, তাঁরা কখনও নেতা হতে পারেন না।
সেনাপ্রধানের ইঙ্গিত যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-র বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আন্দোলনের দিকেই ছিল, তা স্পষ্ট। কিন্তু তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়। এক জন সেনাপ্রধান হিসেবে রাজনৈতিক কোনও বিষয়ে মত প্রকাশ করার এক্তিয়ার না থাকলেও কী ভাবে তিনি ওই মন্তব্য করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে নানা মহলে। সরব হয় কংগ্রেস-সহ বিরোধীরাও।
কিন্তু সেই বিতর্কে সেনাপ্রধান রাওয়াতকে ‘ডিফেন্স’ করতে ব্যাট ধরলেন ভি কে সিংহ। বিরোধীদের আক্রমণ করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের মহান দেশে বিরোধীরা যে কোনও বিষয়কেই বিতর্কিত বানিয়ে ফেলতে পারে। কোন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত এই কথা বলেছেন, সেটা আগে দেখা উচিত। ওঁকে জিজ্ঞেস করুন, ঠিক কী বলতে চেয়েছেন। আমি যদি অযথা সম্পত্তি ভাঙচুর না করার জন্য ছাত্রদের বলি, সেটা কি রাজনীতি? নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন। সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানুন, কোন প্রেক্ষিতে তিনি ওই কথা বলেছেন।’’
বিরোধীদের উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি ফুটবল খেললেও বিরোধীরা বলবেন রাজনীতি করছি। আপনারা যদি বুঝতে না পারেন যে, কোন প্রেক্ষিতে উনি (সেনাপ্রধান) তা হলে তাঁর কাছে যান এবং যাচাই করুন। উনি যদি ভাঙচুর-হিংসা থেকে বিরত থাকার জন্য পড়ুয়াদের উপদেশ দেন, সেটা খারাপ নয়। জানি না এর মধ্যে দোষের কী আছে?’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, ছাত্রদের উপদেশ দেওয়া বা নেতা কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে মন্তব্য করা দোষের নয়। কিন্তু সেনাপ্রধান হিসেবে ওই মন্তব্য অবশ্যই ‘অন্যায়’। তাঁদের যুক্তি, সেনার আইনেই বলা হয়েছে, বাহিনীর কারও কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি বা ধর্না বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার অধিকার নেই। সংবাদমাধ্যমে বা কোনও বইয়েও রাজনৈতিক মতামত দিতে পারবেন না। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করে সেই নিয়মকে লঙ্ঘন করেছেন সেনাপ্রধান।