মীনাক্ষি লেখি ও সত্য নাদেল্লা। —ফাইল চিত্র
রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘গুলি করে মারা’র কথা বলেছেন। উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন ‘জ্যান্ত পুঁতে দেব’। সেই প্রবণতায় সত্য নাদেল্লাকেও ছাড়ল না বিজেপি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-র বিরুদ্ধে মুখ খোলায় মাইক্রোসফট কর্তাকে তীব্র আক্রমণ করলেন বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষী লেখি। টুইটারে তাঁর কটাক্ষ, ‘সাক্ষরদেরও শিক্ষিত হওয়া দরকার’ এবং সত্য নাদেলার মন্তব্যই ‘প্রকৃষ্ট উদাহরণ’।
সিএএ-র বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছেই। আইন পাশ হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে তোলপাড় পড়েছে। তার মধ্যেই সোমবার একটি মার্কিন ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক বেন স্মিথকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মাইক্রোসফট সিইও নাদেল্লা বলেন, ‘‘যা হচ্ছে, তা খুবই খারাপ, খুবই দুঃখের। আমি দেখতে চাই, ভারতে এক জন বাংলাদেশি অভিবাসী ইনফোসিসের সিইও হচ্ছেন বা ইউনিকর্নের মতো স্টার্ট আপ খুলছেন।’’
‘মাইক্রোসফট ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে সত্য নাদেল্লাকে উদ্ধৃত করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে নাদেল্লার বক্তব্য, ‘‘আশা করি ভারতে উদ্বাস্তু হিসেবে এসে কেউ স্টার্ট আপ সংস্থা খুলবেন অথবা বহুজাতিক সংস্থায় নেতৃত্ব দেবেন, যা ভারতীয় অর্থনীতি ও সমাজকে উপকৃত করবে। তবে এই বিষয়ে একটা ভাল খবর এটাই যে, সাধারণ মানুষ এই আইন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছে।’’ ভারতের মতো বহু সংস্কৃতির দেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এবং পরবর্তীকালে আমেরিকায় অভিবাসী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর এই উপলব্ধি বলেও উল্লেখ করেন নাদেল্লা।
কিন্তু সিএএ বিরোধী মন্তব্য করলে বিজেপি যে কাউকেই ছাড়বে না, মাইক্রোসফট কর্তাকে আক্রমণ করে মঙ্গলবার ফের তা বুঝিয়ে দিলেন বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষী লেখি। এ দিন টুইটারে বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষি লিখেছেন, ‘‘কেন সাক্ষর লোকদের শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন, এটাই তার আদর্শ উদাহরণ। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই সিএএ।’’
এই প্রসঙ্গেই আমেরিকায় সিরিয়া-ইরাকের ইয়েজিদিদের নাগরিকত্ব দেওয়া এবং সিরিয়ার মুসলিমদের নাগরিকত্ব না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন মীনাক্ষী। তাঁর বক্তব্য, একই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সিরিয়ার মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয় না, কিন্তু ইয়েজিদিদের দেয়। কারণ ইয়েজিদিরা ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন বা আতঙ্কে বিভিন্ন দেশে গিয়ে আশ্রয় নেন।
সিরিয়া-ইরাক-সহ পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় চার লক্ষ ইয়েজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা আক্রমণের শিকার। ২০১৪ সাল থেকে পরিকল্পনামাফিক তাদের উপর হামলা চালাচ্ছে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা। মহিলা ও শিশু-সহ ইয়েজিদি সম্প্রদায়ের মানুষদের ধরে নিয়ে গিয়ে আইএস জঙ্গিরা গণহত্যা-গণধর্ষণ করেছেন, এমন বহু ঘটনা সামনে এসেছে। বাধ্য হয়ে ইয়েজিদি সম্প্রদায়ের মানুষজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, এমন নজিরও ভূরি ভূরি।
আমেরিকাও তাঁদের আশ্রয় দিয়েছে। ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত বলেই তাঁরা নাগরিকত্বের স্বীকৃতি পান। কিন্তু সিরিয়া থেকে যাওয়া কোনও মুসলিমকে মার্কিন মুলুকে নাগরিকত্ব দেয় না ওয়াশিংটন। নাদেল্লাকে আক্রমণ করতে গিয়ে সেই বিষয়টিই উল্লেখ করেছেন মীনাক্ষি। সিএএ-তে অন্য দেশ থেকে আসা মুসলিমদের নাগরিকত্ব না দেওয়ার কারণ হিসেবে কেন্দ্রের যুক্তি, তাঁরা নিজেদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসেন না। এ দিন সেই যুক্তিই দিতে চেয়েছেন মীনাক্ষিও।