ফিকে হতে থাকা ম্যাজিক ফের ফিরিয়ে আনতে খুব দ্রুত নতুন বন্ধুও জোটাতে হবে দেশের শাসক দলকে। —ফাইল চিত্র।
হাতে সময় খুব কম। লোকসভা নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই। হাওয়া কোন দিকে, দেশের প্রায় সব প্রান্তকে ছুঁয়ে যাওয়া উপনির্বাচনেই তা পরখ করে নেওয়ার সুযোগ ছিল সব পক্ষের সামনে। পরখ করেও নিল শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। বলাই বাহুল্য, ভোটের ফল অশনিসঙ্কেত দিয়ে দিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিজেপি-কে। ঔদ্ধত্যের যে অভিযোগ উঠছে, তা কি সত্যি? বিজেপি-কে ভেবে দেখতে হবে। বার্তা দিল দেশ। ফিকে হতে থাকা ম্যাজিক ফের ফিরিয়ে আনতে খুব দ্রুত নতুন বন্ধুও জোটাতে হবে দেশের শাসক দলকে। এ বার্তাও দিয়ে দিল এই উপনির্বাচন।
৪টি লোকসভা এবং ১১টি বিধানসভা আসনে ভোট হয়েছিল। বিজেপি এবং উত্তর-পূর্বের জোটসঙ্গী এনডিপিপি মিলে পেল ২টি লোকসভা আসন। বাকি ২টি পেল বিরোধীরা। আর ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি পেল মাত্র ১টি। ১০টি-ই বিরোধীদের ঝুলিতে গেল।
পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের জন্য যখন কোমর বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে প্রায় গোটা দেশের রাজনৈতিক শিবির, তখন এই রকম নির্বাচনী ফলাফল যে বিজেপি-র পক্ষে মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সংশয় নেই।
আরও পড়ুন
দেশজোড়া উপনির্বাচনে জোর ধাক্কা গেরুয়া রথে, অশনিসঙ্কেত সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশে
২০১৪ থেকে দেশ জুড়ে যে গেরুয়া ঝড় তুলে দিয়েছিল বিজেপি, তা হঠাৎ এত মিইয়ে গেল কী ভাবে? কেন এত খারাপ ফল বিজেপির? বিশ্লেষকরা বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরছেন।
প্রথমত, অতি কট্টর হিন্দুত্ব দীর্ঘমেয়াদে কার্যকরী হয় না ভারতে। ২০১৪-র ভোটে বা পরে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মেরুকরণের স্বার্থে হিন্দুত্বের জিগির তোলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু যত দিন গিয়েছে, জিগির তত ফিকে হয়েছে। উপনির্বাচনে এসে সে নীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
দ্বিতীয়ত, বিজেপি-র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঔদ্ধত্যের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে নানা শিবির থেকেই। বিরোধী দলকে গুরুত্বই না দেওয়া, ক্ষোভ-বিক্ষোভ বা অসন্তোষকে পাত্তা না দেওয়া, বিধায়ক-সাংসদ-মন্ত্রীদের উদ্ধত আচরণ— এমন নানা প্রবণতা দেখা দেখা যেতে শুরু করেছে নানা রাজ্যে। অভিযোগ বিরোধীদের।
তৃতীয়ত, ঔদ্ধত্য এবং একতরফা সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সরকার চালানোর অভিযোগ শুধু বিরোধীদের তরফ থেকে নয়, বেশ কয়েকটি শরিক দলের তরফ থেকেও উঠছে। মহারাষ্ট্রে শিবসেনা তীব্র বিরোধিতা শুরু করেছে বিজেপির। সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। নির্বাচনেও আর তাদের সঙ্গে জোট গড়ে লড়ছে না বিজেপির সবচেয়ে পুরনো শরিকটি। অন্ধ্রপ্রদেশে আরও খারাপ পরিস্থিতি। এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে টিডিপি। বিহারের শরিক জেডি(ইউ)-ও বড় শরিকের উপরে একেবারেই সন্তুষ্ট নয় বলে গুঞ্জন। শরিকদের সঙ্গে এই মনোমালিন্য জোটের ভোটব্যাঙ্কে যেমন প্রভাব ফেলেছে, তেমনই বিরূপ বার্তা দিয়েছে জনমানসেও।
আরও পড়ুন
একজোট হলে কী হয়, দেখাল এই ফল
এই পরিস্থিতিতে কী করনীয় বিজেপির? ২০১৯-এর আগে পরিস্থিতি সামলে নিতে কী করা দরকার? বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথমত, ঔদ্ধত্য কমিয়ে শরিকদের কাছে টানতে হবে। দ্বিতীয়ত, গেরুয়া পাল থেকে হাওয়া যে ভাবে সরতে শুরু করেছে, তা রুখতে হবে। তার জন্য বিজেপি-কে বন্ধু বা শরিক বাড়াতে হবে। বিভিন্ন রাজ্যে নতুন শরিক জোগা়ড় করতে হবে। বিজেপি-র পালে হাওয়া কমছে বলে ধারণা তৈরি হচ্ছে, সেই ধারণায় ধাক্কা দিতে হবে।
বিরোধী শিবিরে ঐক্যের যে ছবি এখন দেখা যাচ্ছে, লোকসভা ভোট পর্যন্ত তা বহাল থাকলে বেশ কিছু রাজ্যে বিজেপি যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, সে কথা ঘরোয়া আলাপচারিতায় বিজেপির শীর্ষনেতারাও স্বীকার করছেন। তবে উপনির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পরে আত্মসমীক্ষণের প্রয়োজনটা বিজেপি নেতৃত্ব উপলব্ধি করছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।