বিজেপির উদ্বেগ বাড়িয়ে উপনির্বাচনে থমকাল গেরুয়া ঝড়

গত দু’বছরে ৬টি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার আরও দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে হারের পরে রাজনৈতিক হিসেবে তো বটেই, অঙ্কের হিসেবেও বিজেপি বেশ চাপে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০৪:১২
Share:

লখনউতে পার্টি অফিসের বাইরে সমাজবাদী পার্টি কর্মীদের জয়োল্লাস। ছবি: পিটিআই।

লোকসভা নির্বাচনের আগেই বিপদঘণ্টা বেজে উঠল গেরুয়া শিবিরে। আজ লোকসভা এবং বিধানসভা মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১৫টি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের (যার মধ্যে ৪টি লোকসভা কেন্দ্র) ফলাফলে স্পষ্ট, দেশ জুড়ে জোরালো হচ্ছে বিজেপি-বিরোধী হাওয়া।

Advertisement

রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের কৈরানা লোকসভা এবং নুরপুর বিধানসভার উপনির্বাচন ছিল বিজেপির অগ্নিপরীক্ষা। দু’টিতেই হেরেছে বিজেপি। কৈরানায় জিতেছেন জোট সমর্থিত (এসপি, বিএসপি এবং কংগ্রেস) আরএলডি প্রার্থী তবস্সুম হাসান এবং নুরপুরে এসপি প্রার্থী নায়মুল হাসান। চারটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপির জয় এসেছে একমাত্র মহারাষ্ট্রের পালঘর কেন্দ্রে। সেটিকেও ব্যঙ্গ করে ‘সেমসাইড’ বলছেন বিরোধীরা! কারণ সেই জয় বিজেপিরই পুরনো শরিক শিবসেনাকে হারিয়ে! ফলে বিজেপির এই সান্ত্বনা পুরস্কারও শেষ পর্যন্ত এনডিএ-র ঐক্যেই চিড় ধরাবে বলে ধারণা অনেকের। বিজেপির আরও একটি কঠিন পরীক্ষা ছিল মহারাষ্ট্রের ভান্ডারা-গোন্ডিয়া লোকসভা কেন্দ্রে। ২০১৪ সালে দেশজোড়া মোদী হাওয়ায় এই আসনে এনসিপির প্রফুল্ল পটেলকে হারিয়ে জেতেন বিজেপি প্রার্থী নানা পটোলে। সম্প্রতি সাংসদ পদ এবং বিজেপি থেকে নানা পটোলে পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়। এখানে বিজেপিকে হারিয়ে জিতেছে এনসিপি। সব মিলিয়ে ১৫টি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের মধ্যে বিজেপি জিতেছে মাত্র দু’টিতে। একটি আসনে (নাগাল্যান্ড) বিজেপি সমর্থিত এনডিপিপি। বাকি ১২টিতেই বাজিমাত করেছেন বিরোধীরা।

গত দু’বছরে ৬টি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার আরও দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে হারের পরে রাজনৈতিক হিসেবে তো বটেই, অঙ্কের হিসেবেও বিজেপি বেশ চাপে।

Advertisement

আরও পড়ুন: মোদীর জাদু উধাও, রাহুল ঝাঁপাচ্ছেন

বিরোধীরা স্বাভাবিক ভাবেই এ দিনের ফলাফলে উচ্ছ্বসিত। বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, বিজেপির বিরুদ্ধে যেখানেই এককাট্টা হয়ে লড়াই করা হয়েছে, সেখানেই উড়ে গেছে অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদীদের কৌশল। পরবর্তী লোকসভা ভোটে এটাই পথ দেখাবে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী টুইটারে জয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। আবার উত্তরবঙ্গ সফররত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার বিভিন্ন রাজ্যের ভোটের ফলাফল একটা সংকেত। এটা বিজেপির জন্য অশনি সংকেত।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘উত্তরপ্রদেশই দেশকে পথ দেখাচ্ছে। মায়াবতী, অখিলেশ, কংগ্রেস একজোট হয়ে যা করছেন, তাতে আগামী ভোটে ৭০টি আসনের ফলাফল উল্টো হয়ে যাবে।’’

এ দিনের ভোটের পরে মনোবল চাঙ্গা করার জন্য অন্ধকারেও রূপোলি রেখা খুঁজছেন বিজেপি নেতারা। দলের নেতা শাহনওয়াজ হুসেনের কথায়, ‘‘গত চার বছরে নেতা-কর্মীদের একটা অংশের মধ্যে আত্মতুষ্টি এসে গিয়েছিল। লোকসভা ভোটের আগে উপনির্বাচনের এই ফলাফল তাই শাপে বর হল।’’ প্রায় একই সুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘একটা বড় লাফ দিতে গেলে দু’পা পিছোতে হয়। আমরা বড় লাফই দেব।’’ বিজেপির একাংশ বলছে, কিছু কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সঙ্গে গোটা দেশের লোকসভা নির্বাচনকে এক করে দেখাটা বোকামি। কারণ উপনির্বাচন হয় স্থানীয় ‘ছোটখাটো’ বিষয়ের উপর।

পশ্চিমবঙ্গের মহেশতলায় তৃণমূলের বিপুল জয় না হয় প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু উপনির্বাচনের ফলাফল বলছে, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডে শাসক দল হওয়া সত্ত্বেও জোর ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। বিহারে জোকিহাট আসনে শাসক জেডি(ইউ)-বিজেপি জোটকে হারিয়ে জিতেছেন প্রয়াত তসলিমউদ্দিনের ছোট ছেলে তথা লালু প্রসাদ যাদবের দলের (আরজেডি) প্রার্থী। লালু প্রসাদের ছেলে তেজস্বীর বক্তব্য, রাহুল গাঁধী, অখিলেশ যাদব এবং মায়াবতী— এই তিন দলের শক্তিই জোকিহাটে তাঁদের প্রার্থীকে জিততে সাহায্য করেছেন।

রাজনৈতিক বার্তার প্রশ্নে কর্নাটকের রাজরাজেশ্বরী নগরের আসনটিতে কংগ্রেসের জয়ও গুরুত্বপূর্ণ। কর্নাটক বিধানসভায় সদ্য মুখ পুড়েছে বিজেপির। দু’সপ্তাহের ব্যবধানে ফের হারল তারা। এই কেন্দ্রে একক ভাবে লড়ে বিজেপির তুলসী মানিরাজু গৌড়াকে ৪১,১৬২ ভোটে হারিয়েছেন কংগ্রেসের এন মণিরত্ন। তৃতীয় স্থানে সরকারে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী জেডি(এস)-এর প্রার্থী জিএইচ রামচন্দ্র।

ঝাড়খণ্ডের গোমিয়া এবং সিলি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপিকে হারিয়ে আসন দু’টি নিজেদের দখলেই রেখেছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)। কংগ্রেসের বক্তব্য, এই এলাকায় আদিবাসীদের উপর চরম অবহেলার ফলাফলই প্রতিফলিত হয়েছে ফলাফলে। জেএমএম-এর জয়ের অর্থ বিজেপি-বিরোধী জোটের হাত শক্তিশালী হওয়া। পঞ্জাবের শাহকোট কেন্দ্রে এনডিএ-র শরিক অকালি দলের প্রার্থীকে হারিয়ে জিতেছে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহের সরকারের জনপ্রিয়তার হাত ধরেই অকালি দলের দুর্গ এই কেন্দ্রে জয় এসেছে বলে দাবি কংগ্রেসের।

দিনের শেষে বিজেপির ঝুলিতে এসেছে শুধু মহারাষ্ট্রের পালঘর লোকসভা কেন্দ্র এবং উত্তরাখণ্ডের থারালি বিধানসভা কেন্দ্র। নাগাল্যান্ডের লোকসভা কেন্দ্রটি জিতেছে বিজেপির শরিক এনডিপিপি। মেঘালয়ের আমপাতি বিধানসভা আসনটি ধরে রেখেছে কংগ্রেস। কেরলের চেঙ্গান্নুর আসনটিও নিজেদের দখলে রেখেছে সিপিএম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement