এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
এই বছরের শুরুতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী যখন ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ শুরু করে পথে নেমেছেন, তখন তাঁর হাতে একটি পিগি ব্যাঙ্ক তুলে দিয়েছিল ব্যবসায়ী মনোজ পারমারের ছেলে। গতকাল ভোরে মধ্যপ্রদেশের সেহোর জেলার বাসভবনে মনোজ ও তাঁর স্ত্রী নেহার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, মনোজদের পরিবার অভিযোগ করেছে, তদন্তকারী সংস্থা ইডি ওই দম্পতির উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছিল। মনোজ ও নেহার ১৮, ১৬ ও ১৩ বছর বয়সি তিনটি সন্তান রয়েছে। মনোজের ১৬ বছর বয়সি সন্তান অভিযোগ করেছে, ইডির তদন্তের ফলে তাঁর বাবা-মা প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। তার ফলেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা। কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ বলেছেন, ‘‘এটা আত্মহত্যা নয়, হত্যা।’’ কী কারণে ওই দম্পতির মৃত্যু হল, তা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন কংগ্রেস নেতা।
বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে সিবিআইয়ের ২০১৭ সালের এফআইআরের পর গত ৫ ডিসেম্বরে ইন্দোর ও সেহোরে মনোজদের চারটি সম্পত্তিতে হানা দিয়েছিল ইডি। তাঁদের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি নিয়ে নেওয়া হয়। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে থাকা প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা আটক করা হয়। সরকারি ব্যাঙ্কের প্রায় ৬ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে মনোজকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। মনোজদের পরিবারের দাবি, ইডি তদন্ত করতে গিয়ে যে ভাবে এগোচ্ছিল, তাতে ভেঙে পড়েছিলেন ওই দম্পতি। জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি কমলেশ পারমার জানিয়েছেন, রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’-র সময় ব্যবসায়ী মনোজ পারমারের ছেলে কংগ্রেস নেতার হাতে পিগি ব্যাঙ্ক তুলে দিয়েছিল। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহও ইডির বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন। এক্স হ্যান্ডলে দিগ্বিজয় লিখেছেন, ‘‘উপযুক্ত কারণ ছাড়াই ইডি সেহোর জেলার মনোজ পারমারকে হেনস্থা করেছিল। রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’-র সময় মনোজের সন্তান তাঁকে একটি পিগি ব্যাঙ্ক উপহার দেয়। ইডির অ্যাসিট্যান্ট ডিরেক্টর সঞ্জিত কুমার সাহুর নেতৃত্ব তাঁর বাসভবনে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। মনোজ মনে করতেন, কংগ্রেসকে সমর্থন করেন বলেই তাঁকে নিশানা করা হয়েছে।’’ দিগ্বিজয়ের কথায়, ‘‘আমি মনোজকে আইনি সহায়তা পেতে সাহায্য করেছিলাম। কিন্তু আজ সকালে মনোজ ও তাঁর স্ত্রী-র আত্মহত্যার খবর শুনলাম। ইডির ডিরেক্টর বিষয়টির তদন্ত করে দেখুন, আমি সেই দাবি তুলছি।’’ জানা গিয়েছে, মনোজের পাঁচ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোটেও ইডির আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তাতে তিনি ইডির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করেছেন। মনোজের সন্তানকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানো ও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে তদন্তকারী সংস্থার ওই আধিকারিক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন অভিযোগ করা হয়েছে। সুইসাইড নোটে ওই ব্যবসায়ী আরও লিখেছেন, ‘‘জাল বিবৃতিতে আমাকে জোর করে সই করানো হয়েছে। ফোন আটক করা হয়েছে। অন্য মামলাতেও ৃফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে।’’ সন্তানদের দেখভালের জন্য রাহুল গান্ধীর উদ্দেশে আর্জি জানিয়ে আত্মহত্যার পথ নিয়েছেন মনোজ।
২০১৭ সালে সিবিআই অভিযোগ আনে, ভুয়ো নথি দিয়ে মনোজ কোটি কোটি টাকা ঋণ নেন। সেই এফআইআর খারিজ করতে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন মনোজ। কিন্তু হাই কোর্ট সে আর্জি খারিজ করে।