ভেসে যাওয়া সেই বাসটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে সেনা বাহিনী। বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরিতে ছবি: পিটিআই।
প্রবল বৃষ্টি আর হড়পা বানে বিপর্যস্ত জম্মু-কাশ্মীরের জনজীবন। গত তিন দিনের টানা বর্ষণে ইতিমধ্যেই ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। আবহাওয়া দফতরের খবর, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। উল্টে উপত্যকার একটা বড় অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে বায়ুসেনাকেও।
আজ রাজৌরি জেলায় জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বরযাত্রীদের একটি আস্ত বাস। সেনা সূত্রের খবর, আজ সকালে প্রায় ৫০ জন যাত্রী নিয়ে লাম-দারহাল-মৌশেরা সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল বাসটি। হড়পা বানে ফুলেফেঁপে ওঠা গম্ভীর নদীর জলের তোড়ে আচমকাই ভেসে যায় সেটি। বাসের চালক ও কন্ডাক্টর-সহ ছ’জন সেই মুহূর্তে বাস থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে সেই ছ’জনকে উদ্ধার করে সেনা। কিন্তু ৪৫ জন যাত্রীর এখনও কোনও খবর নেই। সেনা জানিয়েছে, নিখোঁজ যাত্রীদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
গত কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে ঝিলম-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি নদীর জলস্তর হু হু করে বাড়ছে। দক্ষিণ কাশ্মীরের অন্তত ৪০টি গ্রাম ভেসে গিয়েছে। নষ্ট হয়েছে প্রায় দেড়শোটি বাড়ি। শ’খানেক বন্যা কবলিতকে ইতিমধ্যেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর। অনন্তনাগ, পুঞ্চ, ডোডা, বারামুলাা, বদগাম, রাজৌরি, রাম্বান, উধমপুর, কাঠুয়া ইত্যাদি এলাকায় জারি হয়েছে সতর্কতা। জলবন্দি হাজারখানেক রাজ্যবাসী।
শ্রীনগরের অবস্থাও শোচনীয়। রাম মুন্সি বাগে ঝিলম নদী বিপদসীমার প্রায় সাত ফুট উঁচু দিয়ে বইছে। রাজধানীর বেশ কিছু অভিজাত এলাকা এখন জলের তলায়। পদশাহী বাগ এলাকার বাসিন্দা ইমরান ইউসুফ বললেন, “ভোর পাঁচটা থেকে নীচের তলা থেকে উপরে জিনিসপত্র সরাচ্ছি। এর পর জল না সরলে আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।” বারজুল্লা এলাকার একটি হাসপাতালের একতলা পুরোপুরি জলমগ্ন হওয়ায় সমস্ত রোগীকে উপরের তলায় সরাতে হয়েছে।
সরকারি তরফে কোনও সাহায্য মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। কুলগামের হামশালিবাগ এলাকার বিধায়ক আবদুল গফ্ফাল সোফি জানাচ্ছেন, এলাকায় সরকারের কোনও প্রতিনিধির দেখা মেলেনি। তাঁর কথায়, “আমার কাছে যা খবর, এখনও পর্যন্ত যা করার স্থানীয় বাসিন্দারাই করছেন। কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি।” একই অভিযোগ শ্রীনগরের হামদানিয়া কলোনির মুস্তাক আলির। তাঁর কথায়, “রাত দু’টো থেকে জেলা প্রশাসনের সাহায্য চাইছি। কিন্তু কোথায় কী। সকালে মাত্র দু’টো নৌকো এসেছে। যাতে চার জন করে লোককে সরানো যেতে পারে। অথচ শ’য়ে শ’য়ে বাসিন্দা এখানে জলে আটকে রয়েছে।”
এই অবস্থায় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে উদ্ধারকাজে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা।