রাজকোষের চাপের বোঝা রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ছবি: পিটিআই।
ভোটারদের মন জেতার চেষ্টায় দেদার ঘোষণার চাপ পড়েছে রাজকোষে। কেন্দ্রের হিসেব ঠিক রাখতে গিয়ে সেই চাপের বোঝা রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। শুক্রবারের বাজেটের পর এমনই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রের কর আদায় থেকে রাজ্যের প্রাপ্য ২৬,৬৩৯ কোটি টাকা কমিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। মুখে কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার কথা বললেও মোদী সরকার আসলে রাজ্যের ঘাড়ে বোঝা চাপিয়েছেন। বাজেট নথি খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে বিরোধী রাজ্যগুলির অর্থমন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে সরব হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের ধারণা, চলতি অর্থ বছরে কেন্দ্রের মোট রাজস্ব আয় আশানুরূপ হয়নি। কেন্দ্রের মোট আয় কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ হয়। কেন্দ্র নিজের ভাগের অর্থ ঠিক রেখে রাজ্যগুলির পাওনা কমিয়ে দিয়েছে।
২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে চলতি অর্থ বছরের বাজেট পেশের সময় অরুণ জেটলি হিসেব দেখিয়েছিলেন, নানা রকম কর থেকে কেন্দ্রের প্রায় ২২.৭১ লক্ষ কোটি টাকা আয় হবে। তা থেকে রাজ্যগুলিকে প্রায় ৭.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়ার পর কেন্দ্রের হাতে ১৪.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা থাকবে।
এ বার ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বাজেট পেশ করতে গিয়ে বলেছেন, বাস্তবে ২২.৭১-র বদলে ২২.৪৮ লক্ষ কোটি টাকা আয় হয়েছে। কেন্দ্রের হাতে সেই ১৪.৮৩ লক্ষ কোটি টাকাই রেখে দিয়ে রাজ্যের ভাগ কমিয়ে দিয়েছেন তিনি। রাজ্যগুলি ৭.৮৮ লক্ষ কোটি টাকার বদলে পাচ্ছে ৭.৬১ লক্ষ কোটি টাকা। তাদের আয় প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা কমে যাবে।
বিরোধী দল শাসিত এক রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা হলে, সব রাজ্যই মুশকিলে পড়বে। বিশেষ করে বড় রাজ্যগুলি। কারণ কেন্দ্রের অনুমানের উপর ভিত্তি করেই, কেন্দ্রীয় করের ভাগ ধরে রাজ্যের বাজেট তৈরি হয়েছে। এ বার কেন্দ্র থেকে রাজ্যের আয় কমে গেলে রাজ্যের বাজেটেও তার ধাক্কা লাগবে।’’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘এই বাজেট আসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে বিরাট হামলা। মোদী সরকারের তৈরি সহযোগিতামূলক কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক কথাটা আসলে জুমলা। সেই জুমলা তারা নিজেরাই কবর দিল।’’
অর্থনীতির গবেষক প্রসেনজিৎ বসু বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের এর ফলে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় করের ভাগ বাবদ আয় কমে যাবে বলে আমার ধারণা। এর ফলে রাজ্যগুলি রাজকোষ ঘাটতি সামাল দিতে গিয়ে মুশকিলে পড়বে।’’