ফাইল চিত্র।
বাজেট মানেই একটা গুরুগম্ভীর বিষয়। দেশের অর্থনীতি, আয়-ব্যয়, উন্নয়নের দীর্ঘ সময়ের কচকচানি। সেই গুরুগম্ভীর পরিবেশকে হালকা করতে বাজেটের মাঝেই কবিতা, জোক, শায়রির মতো বিষয়ও পেশ করেন অর্থমন্ত্রীরা। তা সে প্রণব মুখোপাধ্যায় হোক, অরুণ জেটলি বা মনমোহন সিংহ। প্রত্যেক অর্থমন্ত্রীই নিজ নিজ ভঙ্গিমায় বাজেটের মাঝে কবিতা পেশ করেছেন।
সালটা ১৯৯১। তত্কালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সংসদে পৌঁছে বাজেট পড়া শুরু করলেন। দেশের অর্থনীতি, আয়-ব্যয় থেকে শুরু করে নানা প্রকল্পের গুরুগম্ভীর বিষয় পাঠ করছিলেন মনমোহন। সেই ভারী হাওয়াকে একটু হালকা করতেই বাজেট স্পিচ-এর মাঝে থামলেন তিনি। যে মনমোহনকে শান্ত, স্বল্পভাষী, মৃদুভাষী হিসেবে চিনতেন সবাই, সে দিন তাঁকে অন্য ভাবে আবিষ্কার করলেন সব মন্ত্রী-সাংসদরা। মুজফফর রাজমির কবিতার দু’লাইন উদ্ধৃত করেন: “ কুছ অ্যায়সে ভি মঞ্জর হ্যায় তারিখ কি নজরোঁ মে/ লমহো নে খাতা কি থি, সাদিয়োঁ নে সাজা পায়ি।” অর্থাত্ কিছু এমন ঘটনার সাক্ষী আছে ইতিহাস যেখানে মুহূর্তরা ভুল করেছিল কিন্তু শাস্তি পেয়েছে যুগ। মনমোহন এই লাইন আওড়াতেই সাংসদরা তাঁর কবিসত্তাকে টেবিল বাজিয়ে স্বাগত জানান।
শুধু মনমোহন সিংহই নন, বাজেট পেশ করতে গিয়ে বার বারই অর্থমন্ত্রীরা আশ্রয় নিয়েছেন কবিতার। প্রণব মুখোপাধ্যায়, যশবন্ত সিন্হা, যশবন্ত সিংহ, পি চিদম্বরম এবং অরুণ জেটলির মতো কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীরা বার বারই কোনও না কোনও কবিতা, শায়রি পরিবেশন করেছেন। শুধু হিন্দিতেই নয়, বাংলা, ইংরাজি, তেলুগু, তামিল, সংস্কৃত, উর্দুতেও সেই কবিতা পেশ করা হয়েছে প্রতি বাজেটেই। আর এখানেই বিবিধ মিলনের একটা ছবি ফুটে উঠেছে বার বার।
আরও পড়ুন: শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তকে কাছে টানার চেষ্টা, ভোটের বাজেটে আর কী কী, দেখে নিন
নিজে এক জন তামিলভাষী হয়েও ১৯৯৭-৯৮ এর বাজেটে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম সকলকে চমকে দিয়ে বাংলায় কবিতা পেশ করেন। ওই দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে বলেন, “দেশ দেশ নন্দিত করি মন্দ্রিত তব ভেরী/ আসিল যত বীরবৃন্দ আসন তব ঘেরি/দিন আগত ওই, ভারত তবু কই?/ সে কি রহিল লুপ্ত আজি সব-জন পশ্চাতে?/ লউক বিশ্বকর্মভার মিলি সবার সাথে।” বাজেট পেশের সময় যে বিরোধীরা হই হই করে উঠছিলেন, এ বার চিদম্বরমের সুপ্ত গুণে মুগ্ধ হয়ে প্রশংসার ঝড় তুললেন। ২০১৩-১৪ র বাজেটেও তামিল কবির লাইনও উদ্ধৃত করেন তিনি— “কালাঙ্গাথু কান্ডা বিনাইক্কান থুলাংগাথু থুক্কাং কাদিনথু সেয়াল।”
আরও পড়ুন: বেকারত্ব কমিয়ে দেখাতে আসছে ‘নয়া সমীক্ষা’, জানালেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা
২০১৫-য় বাজেট পেশ চলাকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু হঠাত্ই উঠে দাঁড়িয়ে এমন একটি জোক বলেন যে গোটা সংসদে হাসির রোল ওঠে। তিনি বলেন, “তেলুগুরা বলেন ‘পাঞ্চালি, পাঞ্চালি’, এর মানে বিতরণ করো। তখন আমি বলেছিলাম ‘পেঞ্চালি পেঞ্চালি’, মানে বাড়াও, বাড়াও উত্পাদন বাড়াও। যদি ‘পেঞ্চালি’ ছাড়া ‘পাঞ্চালি’ করেন, তা হলে শুধু ‘পুঞ্চা’ অর্থাত্ পরনের ধুতিটাই শুধু পড়ে থাকবে। এটাই বাস্তব।” সঙ্গে সঙ্গে সংসদে উপস্থিত সবাই হেসে ফেলেন।
২০১৭-১৮র বাজেট পেশ করতে উঠেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সে সময় গোটা দেশে কালোটাকার বিষয়টি নিয়ে বেশ হইচই চলছিল। সংসদে বাজেট পেশের সময় কালোটাকা নিয়ে সরকারের ভূমিকা বলতে শুরু করতেই হইহই করে ওঠে বিরোধীরা। তখন জেটলি তাঁর কবিসত্তাকে ‘হাতিয়ার’ হিসেবে সামনে আনেন। পাল্টা কবিতাচ্ছলে বিরোধীদের বলেন, “কুছ তো গুল খিলায়েঁ হ্যায়, কুছ আভি খিলানে হ্যায়/ পর বাগ মে আভি কাঁটে কুছ পুরানে হ্যায়।” সরকারের মন্ত্রী-সাংসদরা হাসিতে ফেটে পড়লেন। বিরোধীরাও চুপ!