ছবি: সংগৃহীত।
অনুপ্রবেশের হাত থেকে সীমান্তকে রক্ষা করাই বিএসএফের অন্যতম দায়িত্ব। তাদের ডিজি পঙ্কজ কুমার সিংহ আজ তাঁদের বাহিনীর এক্তিয়ার বৃদ্ধির পিছনে অনুপ্রবেশকেই সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেন। আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়ে দিলেন, “পশ্চিমবঙ্গ ও পঞ্জাবের সরকার বিএএসএফের এক্তিয়ার বাড়ানো নিয়ে যে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছে তা অমূলক ও ভিত্তিহীন।” তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌগত রায়ের প্রশ্নের জবাবে তাঁর দাবি, “বেশি এলাকা জুড়ে বিএসএফ কাজ করলে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে আরও ভাল ভাবে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা করতে পারবে।”
একই যুক্তি দেন বিএসএফের ডিজি পঙ্কজও। তাঁর বক্তব্য, ক্রমাগত অনুপ্রবেশে অসম, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলির সীমান্তবর্তী এলাকার জনসংখ্যার বিন্যাস পাল্টে গিয়েছে। সম্ভবত সেই কারণেই স্থানীয় পুলিশকে আরও বেশি করে সাহায্য করতে বিএসএফের এক্তিয়ার ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। এই সূত্রে তিনি উল্লেখ করেন, গুজরাত ও রাজস্থানের মতো রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত জনশূন্য, তাই সীমান্ত থেকে যথাক্রমে ৮০ কিমি ও ৫০ কিমি এলাকা বিএসএফের এক্তিয়ারে রয়েছে আগে থেকেই। গত অক্টোবরে স্থানীয় পুলিশকে আইনশৃঙ্খলায় সাহায্য করতে পঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমেও সেই এক্তিয়ার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে তাঁর দাবি।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে পঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গ। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের এক্তিয়ার বাড়ানোর বিরুদ্ধে প্রস্তাবও পাশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। সম্প্রতি দিল্লি সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এ বিষয়ে আপত্তির কথা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আপত্তির বিষয়ে কেন্দ্র কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাই সৌগত এ দিন জানতে চেয়েছিলেন সংসদে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যা অমূলক বলে উড়িয়ে দেন। বাংলা-পঞ্জাব, দু’রাজ্যেরই শাসক শিবিরের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত আসলে পিছনের দরজা দিয়ে রাজ্যের এলাকা দখলের চেষ্টা। এতে পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা। তৃণমূলের মতে, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।
এই অভিযোগ খারিজ করে বিএসএফের ডিজি পঙ্কজ দাবি করেন, “দীর্ঘ সময় ধরে অসম ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় জনসংখ্যায় বড় মাপের পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে। সীমান্ত লাগোয়া কিছু জেলায় পাল্টে গিয়েছে ভোটারদের ‘প্যাটার্ন’।” জনসংখ্যার চরিত্র বদল নিয়ে একটি সমীক্ষাও করেছে বাহিনী। তবে সে প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
বিএসএফের তরফে দাবি করা হয়েছে, অন্য ছ’টি আধাসামরিক বাহিনীর মতোই তাদের তল্লাশি ও আটক করার অধিকার আগে থেকেই রয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পরে তদন্ত করার অধিকার আগের মতোই রাজ্য পুলিশের হাতে থাকছে। এই ক্ষেত্রে কোনও বদল হয়নি। সম্প্রতি তৃণমূলের দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বিএসএফের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ভাবে মহিলাদের তল্লাশি করার অভিযোগ তুলেছিলেন। আজ ডিজি পঙ্কজ বলেন, ‘‘সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার মহিলা কর্মী রয়েছেন। বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় প্রতিটি প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার দরজায় মহিলা সান্ত্রী থাকেন।’’