অল্পেশ।
কোই ধান্দা ছোটা নেহি হোতা!
‘রইস’-এ শাহরুখ খানের সেই বিখ্যাত উক্তি মনে আছে?
অল্পেশ ঠাকুরের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে।
হওয়ারই কথা। তাঁর হিরো ‘রইস’ নন। যে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, নেতা-পুলিশদের পকেটে পুরে গুজরাতে দেশি মদের ব্যবসা করে। অল্পেশের হিরো নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি অভিনীত পুলিশ অফিসার এসিপি মজমুদার। রইস-দের দেশি মদের ব্যবসা বন্ধ করাই যার লক্ষ্য।
আরও পড়ুন: আজ সন্ধ্যাতেই কি কংগ্রেস সভাপতি রাহুল?
হার্দিক পটেল, অল্পেশ ঠাকুর, জিগ্নেশ মেবানী— গুজরাত রাজনীতির তিন ‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যানের’ অন্যতম অল্পেশের উত্থানই দেশি মদের ব্যবসা বন্ধ করার লড়াই থেকে। অমদাবাদের রানিপে তাঁর ক্ষত্রিয় ঠাকুর সেনার অফিসে বসে অল্পেশের সটান প্রশ্ন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী রাতারাতি নোট-বন্দি করতে পারেন। শরাব-বন্দি করতে পারেন না?’’
গত ৫০ বছর ধরে গুজরাতে মদ নিষিদ্ধ। মদ তৈরি, বেচাকেনা, মদ্যপান— সবই বেআইনি। কিন্তু নামেই ‘ড্রাই স্টেট’। দেশি মদের ফল্গুধারা সবরমতীর জলের মতোই নিঃশব্দে বইছে। সিনেমার রইস হুসেন ছোটবেলায় স্কুলব্যাগে করে মদের বোতল পাচার করত। তার পর নিজে দেশি মদের ‘হোম ডেলিভারি’ চালু করেছিল। মোদীর রাজ্যে এখনও অলিতে-গলিতে ‘ফোল্ডার’রা হাজির। খবর দিলেই তারা বাড়িতে বোতল পৌঁছে দিয়ে যায়।
আবদুল লতিফ নামে দাউদের ডি-কোম্পানির যে মাফিয়া ডনের আদলে ‘রইস’ তৈরি, সত্তরের দশকে তার উত্থান হয়েছিল অমদাবাদের কালুপুরা থেকে। অল্পেশের অভিযোগ, এখনও কালুপুরার মতো অমদাবাদের গলিঘুঁজিতে দেশি মদের কারবার চলছে। বছরে ১০ থেকে ১৫ হাজার লোক নেশার শিকার হয়ে প্রাণ হারায়। ঘুষের ‘হিসসা’ পুলিশের নিচুতলা থেকে পৌঁছয় বিজেপির নেতা-মন্ত্রী পর্যন্ত। অল্পেশ বলেন, ‘‘প্রায় ৭০০ মদের ঠেক ভেঙেছি। সর্বত্র ওদের বাঁচাতে আমাদের আগে পুলিশ পৌঁছে যেত।’’
অল্পেশের চাপেই বেআইনি মদের ব্যবসা বন্ধে কড়া আইন চালু করতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীকে। বিজেপি অল্পেশকে দলে টানতেও চেয়েছিল। কিন্তু হার্দিক, জিগ্নেশের মতো তিনিও রাহুল গাঁধীর তুরুপের তাস। কংগ্রেসের টিকিটেই প্রার্থী হয়েছেন। এবং বাজি ধরছেন, বিজেপি ১৫০ আসন পেলে সন্ন্যাস নিয়ে নেবেন।
একটা খটকা রয়ে গিয়েছে তবু। হার্দিক পটেল পাতিদারদের জন্য সংরক্ষণ চাইছেন। ওবিসি-দের মুখিয়া অল্পেশের দাবি, তাঁদের কোটা থেকে পাতিদারদের ভাগ দেওয়া চলবে না। স্ববিরোধের এই প্রশ্নটা অল্পেশ অবশ্য হেসে উড়িয়ে দেন, ‘‘হার্দিক তো ওবিসি কোটার ভাগ চাইছে না। আলাদা সংরক্ষণ চাইছে। তাতে তো আমার আপত্তি নেই। আমি বলছি, সরকারি চাকরি, স্কুলে ওবিসি কোটার আসনগুলো ভর্তি হোক।’’
বিজেপির অভিযোগ, রাহুল গাঁধী জাতপাতের রাজনীতি করছেন। তার জবাবে অল্পেশ বলছেন, ‘‘গুজরাতের ৬০ লক্ষ যুবক-যুবতী বেকার। ৩৯ লক্ষ চাষির মাথায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা ঋণের বোঝা। দেড় কোটি ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধ। জাতপাত-ধর্ম কোথায়? আমি রোজগার-ধান্দার কথা বলছি।’’
ধান্দে সে বড়া কোই ধরম নেহি হোতা! ‘রইস’-এর এই উক্তিটা কিন্তু মানেন অল্পেশ।