ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। —ফাইল চিত্র।
প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা ‘কংগ্রেসের কোলে’ বসে আছেন! সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়াদের সম্পর্কে এই হল মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের মনোভাব।
বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণের ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিংহ ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি হওয়ার পরে সাক্ষী কুস্তি ছেড়েছেন। দিল্লির ফুটপাতে পদ্মশ্রী পুরস্কার রেখে এসেছেন বজরং। কিন্তু জাতীয় কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ বলেছেন, ‘‘প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা কংগ্রেসের কোলে বসে আছেন বলে অন্য কুস্তিগিরেরা তাঁদের সমর্থন করছেন না। এখন ওঁদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে আমি কি গলায় দড়ি দেব? আমাকে বলুন তো, শীর্ষস্থানীয় কুস্তিগিরেরা যদি এখনও প্রতিবাদ চালিয়ে যান আর সাক্ষী মালিক অবসর নিয়ে ফেলেন, তাতে আমি কী করতে পারি? তাঁরা মাসের পর মাস আমার উদ্দেশে কটূক্তি করছেন। এই অধিকার তাঁদের কে দিয়েছে?’’
ঘটনাচক্রে, গত কালই সাক্ষীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। কংগ্রেস নেত্রী বলেছিলেন, এক জন নারী হিসেবেই সাক্ষীর কাছে গিয়েছিলেন তিনি। সাক্ষী কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন, এমন জল্পনাও ছড়িয়ে পড়ে। লোকসভা ভোটে হরিয়ানা থেকে তিনি কংগ্রেসের টিকিটে লড়বেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে এক চ্যানেলকে সাক্ষী জানান, ভবিষ্যতে কী হবে, বলা যায় না। এখনই এই বিষয়ে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেননি।
কুস্তিগিরদের সমর্থনে যাঁরা আসবেন, তাঁরা সবাই স্বাগত। বিজেপির কেউ হলেও স্বাগত।
ব্রিজভূষণ শিবিরের বিরুদ্ধে সুর অবশ্য একেবারেই নরম করেননি অলিম্পিক্স পদকজয়ী সাক্ষী। চ্যানেলটিকে তিনি বলেন, ‘‘ব্রিজভূষণের ব্যবসায়িক অংশীদার নির্বাচনে জেতার পর থেকেই এ বিষয়টির কোনও নিশ্চয়তা নেই যে, এক জনও মহিলা সুবিচার পাবেন। এই মামলায় যারা মুখ খুলেছিল, ক্ষমতায় ফিরে তাদের এ বার হুমকি দেবে ওরা। কয়েক জন কুস্তিগিরকে ডোপিংয়ের মিথ্যা অভিযোগে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওরা নিশানা করছে নম্র পরিবারের মেয়েদের। তারা আর কতই বা লড়তে পারবে?’’ সাক্ষী জানান, এই কারণেই তাঁরা কোনও মহিলাকে সভাপতি পদে দেখতে চেয়েছিলেন। তা হলে আরও অনেক মেয়ে নিজেদের কথা বলতে এগিয়ে আসার সাহস পেতেন। সাক্ষী আরও বলেন, খুব ভেবেচিন্তেই তিনি কুস্তি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সঞ্জয় সিংহ যত দিন সভাপতি পদে থাকবেন, তত দিন সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার প্রশ্ন নেই। এ দিকে ব্রিজভূষণের দাবি, ‘‘১১ মাস ধরে কুস্তির উন্নয়ন থমকে ছিল। স্বচ্ছ ভাবে ভোট হয়েছে এবং আমাদের শিবিরের সঞ্জয় সিংহ ওরফে বাবলু পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য প্রার্থী ৩৩ ভোটে হেরেছেন।’’
ব্রিজভূষণ প্রতিবাদীদের বিঁধলেও সাক্ষীর রাজ্য হরিয়ানার আরও এক কুস্তিগির আজ জানিয়েছেন, তিনিও পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেবেন সরকারকে। মূক-বধিরদের অলিম্পিক্সে তিনটি সোনাজয়ী বীরেন্দ্র সিংহ ‘গুঙ্গা পালোয়ান’ বলেও নিজের পরিচয় দেন। সেই নামেই তাঁর এক্স হ্যান্ডল। সেখানে নরেন্দ্র মোদীকে ট্যাগ করে বীরেন্দ্র লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, দেশের কন্যা ও আমার বোনেদের স্বার্থে আমিও পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেব। বোন সাক্ষী মালিকের জন্য আমি গর্বিত।’ এই টুইটের সঙ্গে দেশের আরও দুই স্বনামধন্যকে জড়িয়ে নিয়েছেন বীরেন্দ্র। এক জন, ভারতরত্ন সচিন তেণ্ডুলকর। অন্য জন অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া, যিনি পদ্মশ্রী, খেলরত্নের পাশাপাশি সেনাবাহিনীরও দু’টি পদকে সম্মানিত। পোস্টে তাঁদের ট্যাগ করে বীরেন্দ্র লিখেছেন, ‘দেশের সবচেয়ে উঁচু স্তরের ক্রীড়াবিদদের অনুরোধ করছি, তাঁরাও নিজেদের সিদ্ধান্ত নিন।’
মুখ খুলেছে হরিয়ানা সরকারও। তবে ঠিক সাক্ষীদের সমর্থনে নয়। রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা শাসক জোটের শরিক দল জেজেপি-র নেতা দুষ্মন্ত চৌটালা বলেছেন, ‘‘আবেগ যেন সিদ্ধান্তকে চালিত না করে। ফেডারেশনের ভোট হয়েছে, তার ফল বেরিয়েছে। কিন্তু এত বড় পদক্ষেপ করা ঠিক নয়।’’ কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর অবশ্য মন্তব্যই করতে চাননি। কুস্তিগিরদের প্রতিবাদ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, ‘‘এ নিয়ে যথেষ্ট কথা বলেছি। আর কোনও মন্তব্য করব না।’’