আভুলা দুর্গাপ্রসাদ।
সকালেই মৃত্যু হয়েছে মায়ের। মা হারানোর শোক বুকে চেপে রেখে জয়েন্টের পরীক্ষা দিতে ছুটেছিলেন আভুলা। মায়ের স্বপ্ন যে তাঁকে পূরণ করতেই হবে! পরীক্ষার হলে পৌঁছেছিলেন ঠিকই, কিন্তু মন পড়ে ছিল বাড়িতে নিথর হয়ে শুয়ে থাকা মায়ের দিকে। ও দিকে ছেলে ফেরার অপেক্ষায় স্ত্রীর দেহ আগলে বসেছিলেন মোহন রেড্ডি।
পরীক্ষা শেষ হতেই দ্রুত বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন আভুলা। বাড়িতে পৌঁছনোর পরই তাঁর মায়ের শেষকৃত্য হয়। পরীক্ষার ফল বেরোতে দেখা যায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছেন আভুলা। জয়েন্ট মেনের পরীক্ষায় ৯৬.৪৮ শতাংশ পেয়েছেন তিনি।
আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়েই বড় হয়েছেন তেলঙ্গানার খাম্মামের বাসিন্দা আভুলা দুর্গাপ্রসাদ। বাবা মোহন রেড্ডি ছোট চাষি। মা নরসম্মা ছিলেন দৃষ্টিহীন। আভুলারা দুই ভাই। চাষ করে যে সামান্য টাকা উপার্জন করতেন মোহন, তা দিয়েই দুই ছেলের পড়াশোনা চালাতেন। ছেলেদের যাতে পড়াশোনার অসুবিধা নয়, তাই নিজের গ্রাম ছেড়ে মফস্সলের দিকে চলে আসেন।
আর্থিক অনটনের মধ্যেও নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন আভুলা। টাকার অভাবে কোচিং নিতে পারেননি। গুগলই ছিল তাঁর ভরসা। নরসম্মা চাইতেন, যত কষ্টই হোক তাঁর ছোট ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। শৈশব থেকে পড়াশোনায় যথেষ্ট ভাল আভুলা। তাই মা চাইতেন আভুলা ইঞ্জিনিয়ার হোক। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষা যত কাছে আসছিল, ততই তাঁর মায়ের শরীরের অবনতি হচ্ছিল। যে দিন জয়েন্টের পরীক্ষা ছিল, সে দিনই আভুলার মা মারা যান।
এক দিকে মায়ের মৃত্যু, অন্য দিকে মায়ের স্বপ্ন— এই দুইয়ের মধ্যে মায়ের স্বপ্নকেই বেছে নিয়েছিলেন আভুলা। সেই স্বপ্ন অবশেষে পূরণ হল। জয়েন্টে তেলঙ্গানায় প্রথম হয়েছেন আভুলা। নিজের এই সাফল্য মাকে উৎসর্গ করেছেন আভুলা। তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তিনি আইএএস হতে চান।