Supreme Court

সুপ্রিম কোর্টে আরও এক বাঙালি বিচারপতি, কলকাতার ভূমিপুত্র দীপঙ্কর দত্ত শীর্ষ আদালতে

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ বছরের আইনের কোর্সের প্রথম ব্যাচের স্নাতক ছিলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। ১৯৮৯ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৩২
Share:

বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময়ে শটপাট ও জ্যাভেলিনে প্রথম স্থান তাঁর জন্য বাঁধা থাকত। আড়াই বছর আগে যখন তাঁর কলকাতা হাই কোর্ট থেকে বম্বে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে বদলি হয়, তখন কোভিডের লকডাউনের জন্য বিমান, ট্রেন সব বন্ধ। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত গাড়িতে চেপেই প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে কলকাতা থেকে মুম্বই পৌঁছেছিলেন। ছেলের সঙ্গে পালা করে তিনিও গাড়ি চালিয়েছিলেন।

Advertisement

রবিবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করল কেন্দ্রীয় সরকার। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের সুপারিশের প্রায় আড়াই মাস পরে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আরও এক জন বাঙালি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হতে চলেছেন। এখন কলকাতা হাই কোর্ট থেকে আসা বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু সুপ্রিম কোর্টে কাজ করছেন। এ ছাড়া বিচারপতি হৃষীকেশ রায়ও রয়েছেন। তবে তাঁর ওকালতি ও বিচারপতি হিসেবে কাজ শুরু গৌহাটি হাই কোর্টে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম বম্বে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তকে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। গত আড়াই মাসে এক দিকে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু কলেজিয়াম ব্যবস্থা নিয়ে বিচারবিভাগকে নিশানা করেছেন। উল্টো দিকে বিচারবিভাগ কলেজিয়ামের সুপারিশ সত্ত্বেও বিচারপতিদের নিয়োগে সরকারের টালবাহানা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে বিচারপতি দত্তের নিয়োগ নিয়ে দেরিও অন্যতম কারণ ছিল। আজকের সিদ্ধান্তের পরে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে দীপঙ্কর দত্তের লম্বা ইনিংস শুরু হচ্ছে। ২০৩০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় প্রবীণতম বিচারপতি হিসেবে অবসরনেবেন তিনি।

Advertisement

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ বছরের আইনের কোর্সের প্রথম ব্যাচের স্নাতক ছিলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। ১৯৮৯ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কৌঁসুলি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টেও ওকালতি করেছেন। রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন-সহ শিক্ষা জগতের বিভিন্ন

সরকারি প্রতিষ্ঠানের আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ‘গেস্ট লেকচারার’-ও ছিলেন। কলকাতা হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন ২০০৬-এ। ২০২০-র এপ্রিলে বম্বে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি হন। তাঁর বাবা সলিল কুমার দত্তও কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। ভগ্নীপতি অমিতাভ রায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কাজ করেছেন।

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন বিচারপতি দত্ত পাড়ুই-মামলায় তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডলের প্রতি পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বম্বে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে কোভিডের সময়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য, লকডাউনের ফলে সমস্যায় পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরাহা, বয়স্ক ও বিশেষ ভাবে সক্ষমদের বাড়ি গিয়ে টিকাকরণ, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কাটাছেঁড়া, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্ত, মহারাষ্ট্র পুলিশের কনস্টেবল পদে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের আবেদনের সুযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রায় দিয়েছেন। তাঁর নিয়োগের ফলে শীর্ষ আদালতে বিচারপতিদের ৩৪টি অনুমোদিত পদের মধ্যে বিচারপতিদের সংখ্যা ২৭ থেকে বেড়ে ২৮ জন হতে চলেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement