বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
বিজেপি বলেছিল, দুইয়ে-দুই হবে। হবেই! আর ভোটের পর সিপিএম বলেছিল, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। গণনা বয়কট করবে তারা। এই দুই বক্তব্যেই ‘দেওয়াল লিখন’ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার ত্রিপুরার দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফলঘোষণার পর দেখা গেল, বিজেপি শুধু জিতেছেই তা নয়, প্রতিপক্ষ সিপিএমকে কার্যত জমি ধরিয়ে দিয়ে জিতেছে। ধনপুর কেন্দ্রটি বিজেপিরই ছিল। সেখানে জয় নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিল না গেরুয়া শিবিরের। ত্রিপুরা বিজেপি মন দিয়েছিল বক্সনগরে গেরুয়া পতাকা ওড়াতে। কারণ, বক্সনগর শুধু সিপিএমের দখলে ছিল তা-ই নয়, এই কেন্দ্রটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত।
ভোটের ফলঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, বক্সনগরে বিজেপি প্রার্থী তফজ্জল হোসেন পেয়েছেন ৩৪,১৪৬ ভোট। অন্য দিকে, সিপিএমের মিজান হোসেন পেয়েছেন ৩,৯০৯ ভোট। ধনপুরে বিজেপির বিন্দু দেবনাথ পেয়েছেন ৩০,০০৭ ভোট। সিপিএমের কৌশিক চন্দ পেয়েছেন ১১,১৪৬ ভোট।
ভোটের ফলাফল নিয়ে ত্রিপুরা বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী শুক্রবার বলেন, ‘‘সিপিএম ভোটের পরে ময়দান ছেড়ে দিয়েছিল। কারণ, ওরা বুঝে গিয়েছিল, মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করছে। তাই আর গণনাকেন্দ্র মুখো হয়নি।’’ পক্ষান্তরে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘‘ভোটের ফল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি প্রশাসনকে ব্যবহার করে কার্যত ছেলেখেলা করেছে। এটা কোনও ভোটই হয়নি! মানুষের প্রকৃত রায়ের প্রতিফলন এই ভোটের ফলাফল নয়। ভোট ডাকাতি করেছে বিজেপি।’’
বিজেপি কার্যত মরিয়া হয়ে বক্সনগর জিততে চেয়েছিল। ভোটের ফল ঘোষণার পরে ত্রিপুরা বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, সিপিএম সংখ্যালঘুদের ভুল বুঝিয়ে ওই আসন জিতে আসছিল। এ বার সেটা ভেঙে দেওয়া গিয়েছে। আবার সিপিএমের মধ্যে এই আলোচনা রয়েছে যে, কেন কোনও কেন্দ্রীয় নেতা প্রচারে গেলেন না, কেনই বা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার সে ভাবে সময় দিলেন না, তা নিয়েও।
গত ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের জোট হলেও তিপ্রা মথা পৃথক ভাবে লড়েছিল। তাতে তারা ১৩টি আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠে। তবে উপনির্বাচনে তিপ্রা ঠিক করেছিল, তারা প্রার্থী দেবে না। সমর্থন করবে সিপিএমকে। তিপ্রার পাশাপাশি কংগ্রেসও সমর্থন করেছিল বামেদের। কার্যত এক অলিখিত ‘মহাজোট’ গড়ে ভোট লড়তে নেমেছিল সিপিএম। কিন্তু তার পরেও তাদের শোচনীয় ভাবে পরাস্ত হতে হল।
ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটে ধনপুর কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। জেতার পর তিনি দলের নির্দেশে সাংসদ পদটি রেখে দিয়ে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। অন্য দিকে, বক্সনগর কেন্দ্রটি শেষ ভোটে ছিল সিপিএমের দখলে। সেখানকার বিধায়ক সামসুল হকের মৃত্যু হয় কয়েক মাস আগে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোট হয়েছিল।
মোট ৬০টি আসনের মধ্যে বিজেপি-আইপিএফটি জোট পেয়েছিল ৩৩টি আসন। বাম-কংগ্রেস পেয়েছিল ১৪টি আসন। তিপ্রা মথা পায় ১৩টি আসন। এই জয়ের পরে বামেদের যেমন একটি সংখ্যা কমে গেল, তেমনই বিজেপি বাড়ল বিধানসভায়।