অমিত শাহ।
দু’সপ্তাহ আগে অমিত শাহ বলেছিলেন, একুশের বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে ‘প্রচণ্ড’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসতে চলেছে বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনও নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিন রাস্তায় নামা শুরু করেননি। সেই দাবিকে আরও নির্দিষ্ট করে আজ বিজেপি সভাপতির দাবি, পশ্চিমবঙ্গে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জিতে আসবে বিজেপি। শাহ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে আমরা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে চলেছি। বিজেপি সরকার তৈরি হওয়া সুনিশ্চিত। পশ্চিমবঙ্গের জনতা তৃণমূলের শাসনে বিরক্ত হয়ে উঠেছে।’’
যা শুনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘অমিত শাহ অলীক স্বপ্ন দেখছেন। এ রাজ্যে মানুষ সরকারের প্রতি বিরক্ত কি না, তার প্রমাণ সাম্প্রতিক তিনটি উপনির্বাচন। সেখানে তৃণমূল শুধু জিতেছেই নয়, দু’টি আসন এই প্রথম দখল করেছে। বাস্তববুদ্ধি থাকলে শাহ এ সব হাস্যকর কথা বলতেন না।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সিএএ, এনআরসি ও এনপিআর নিয়ে রোজ অসত্য বলছেন মোদী, শাহেরা। বাংলার মানুষ বিজেপিকে মেনে নেবেন না। তাঁদের ভরসা বামপন্থীরাই।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বোঝা যায়, শাহেরা বাংলার বাস্তবতা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। এটা শুধু অলীক স্বপ্ন নয়, মানুষকে বিভ্রান্ত করার আরও একটা অপচেষ্টা।’’
পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের দুই তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ১৯৬টি আসন জয়ের দাবি করে অমিত শাহ আজ এ কথাও বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে অন্য বিরোধী দলগুলি হাত মেলালেও জিতবে বিজেপি। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা, রাহুল গাঁধী থেকে বিরোধী দলের নেতারা। সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে একজোট হওয়ার জন্য সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন মমতা।
আরও পড়ুন: সিএএ, এনআরসি পুনর্বিবেচনা চান অভিজিৎ-এস্থার
এই ঐক্য যদি দেখা যায় একুশের পশ্চিমবঙ্গে? অমিত শাহের কথায়, ‘‘এক সময়ে ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধেও সব বিরোধী দল একজোট হয়ে আওয়াজ তুলত। সরকার মজবুত হলে বিরোধী দলগুলি জোট গড়ার চেষ্টাই করে। সেই হিসেবে আমাদের সরকার ঠিক জায়গাতেই রয়েছে।’’
গত এক বছরে বিজেপি পাঁচটি রাজ্যে গদি খুইয়েছে। হরিয়ানাতেও একার জোরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা মেলেনি। গোড়াতেই দায় নিজের কাঁধে নিয়ে অমিত শাহ আজ বলেছেন, ‘‘বিজেপি সভাপতি হিসাবে জয়ের কৃতিত্ব যদি আমার হয়, তা হলে ঝাড়খণ্ডে পরাজয়ের দায়ও আমার।’’ তবে পশ্চিমবঙ্গে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী মিলবে বলে দাবি করে অমিত শাহ বলেন, ‘‘আমি তো এটাও বলেছিলাম পশ্চিমবঙ্গে লোকসভায় ২২টি আসন পাব। এসেছে ১৮টি। বলেছিলাম লোকসভায় ৩০০ আসন পাব। ত্রিপুরায় বাম শাসন উৎখাত হবে। অসমে বিজেপি সরকার গড়বে। মিলেছে তো সবই!’’
আরও পড়ুন: আজাদি! ২৩ দিনকে আগলে ৯১ বছরের স্বর
অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অমিত শাহ বাংলা শিখছেন। এ বিষয়ে বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘আমি সব ভাষাকেই ভালবাসি। অনেক ভাষার প্রতিই আমার আগ্রহ রয়েছে।’’ কতটা বাংলা শিখলেন, এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য শাহ এড়িয়ে গিয়েছেন ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ বলে। ২০১৪-য় কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিজেপি পশ্চিমবঙ্গকে পাখির চোখ করেছে। তা সত্ত্বেও ২০১৬-য় বিধানসভা ভোটে জিতে তৃণমূল ক্ষমতায় ফিরেছে। লোকসভায় ধাক্কা খেলেও এনআরসি-র বিরুদ্ধে ক্ষোভের সুবাদে উপনির্বাচনেও বিজেপিকে ধাক্কা দিয়েছে তৃণমূল। শাহের অবশ্য দাবি, বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে তাঁর জবাব, ‘‘মুখ চলে আসবে!’’