রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হওয়াকে হাতিয়ার করেই পথে নামছে বিজেপি। ছবি— পিটিআই।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করে দিয়েছেন লোকসভার স্পিকার। তা নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে পাল্টা হিসাবে দেশ জুড়ে আন্দোলনে নামতে চলেছে বিজেপি। মোদীর পদবি নিয়ে মন্তব্য করে রাহুল দেশের অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদেরই অপমান করেছেন, মনে করছে বিজেপি। সেই কথাই দেশের প্রতিটি কোণে পৌঁছতে চাইছে গেরুয়া ব্রিগেড।
সংসদের সিদ্ধান্তের পর যখন দেশের বিরোধীরা একসুরে মোদী সরকারের সমালোচনা করছে, ঠিক সেই সময় পাল্টা হিসাবে দলের সমস্ত ওবিসি মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। সেখানেই দেশ জুড়ে প্রচার অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে যে একের পর এক টুইটে রাহুলকে আক্রমণ করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘ওবিসি সম্প্রদায়কে চোরের সঙ্গে তুলনা করে রাহুল গান্ধী আসলে তাঁর জাতপাত সংক্রান্ত নোংরা মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তবে একে বারে সম্প্রতি তিনি যা করেছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক কার্যকলাপকে এই নিম্নমানে নামিয়ে এনেছেন।’’ নড্ডা অন্য একটি টুইটে দাবি করেছেন, রাহুল বার বার ওবিসি সম্প্রদায়কে আঘাত করে চলেছেন। সেই কারণেই সুরতের আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা শুনিয়েছে।
লোকসভার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর বিজেপি এ বার এই লাইনেই রাহুলকে আরও কোণঠাসা করার পরিকল্পনা সাজাতে বসে গিয়েছে। প্রহ্লাদের ডাকা বৈঠকে হাজির ছিলেন, ধর্মেন্দ্র প্রধান, কৃশণ পাল গুর্জর, প্রহ্লাদ সিংহ পটেল, রামেশ্বর তেলির মতো ওবিসি সম্প্রদায়ের বিজেপি নেতা তথা মন্ত্রীরা। বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও রাহুলের দিকে তীক্ষ্ণ কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী মোট ৭টি মামলায় জামিনে মুক্ত আছেন। প্রথমে কংগ্রেসের লোকেরা জাতি, ধর্মের নামে মানুষের মধ্যে বিভাজন করতেন, এখন তো তাঁরা সরাসরি অপমান করার রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছেন। রাহুলের মন্তব্যে ওবিসি সম্প্রদায়ের মানুষেরা অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেছেন।’’
গুজরাতে মোদী পদবিধারীরা সাধারণত ঘাঞ্চি সম্প্রদায়ের। বাংলায় যাঁরা জাতপাতের হিসাব রাখেন, তাঁরা এই সম্প্রদায়ের মানুষদের তেলি বলে উল্লেখ করে থাকেন। ভোট রাজনীতির ময়দানে সেই ওবিসি সম্প্রদায় বিজেপির মস্ত বড় মূলধন। মোদীকে আক্রমণ করতে গিয়ে রাহুল আসলে সামগ্রিক ভাবে ওবিসি সম্প্রদায়কেই আঘাত করেছেন, এই তত্ত্বই দেশ জুড়ে প্রচার করতে চলেছে বিজেপি। রাহুল-ইস্যুতে তৃণমূল, আপের মতো কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা বিরোধী দলও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর যে সহানুভূতির হাওয়া বইছে তাকে আটকানোই এখন বিজেপির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ওবিসি সম্প্রদায়কে রাহুল অপমান করেছেন, এই স্লোগানেই পাল্টা বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি।