সোমবার সংসদ চত্বরে নরেন্দ্র মোদী। নিজস্ব চিত্র।
ছাতা হাতে সাংবাদিক বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই ছবিকে ছড়িয়ে দিতে মরিয়া বিজেপি। ছবির সঙ্গে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের দাবি, এমনটা আর কেউ করতে পারেন না। স্বাধীনতার পরে ভারতে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে এই ভাবে নিজের ছাতা নিজে হাতে নিতে দেখা যায়নি।
সোমবার সংসদে শুরু হয়েছে বাদল অধিবেশন। আর বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন ‘বাদলা আবহাওয়া’ ছিল দিল্লিতে। সংসদ ভবন চত্বরে যখন মোদীর গাড়ি এসে পৌঁছয় তখন টিপ টিপ করে বৃষ্টিও হচ্ছিল। রীতি অনুযায়ী, সংসদে অধিবেশন শুরুর প্রথম দিন লোকসভায় ঢোকার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই রীতি মেনেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মোদী। তার আগে গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা পথ ছাতা মাথায় হেঁটে আসেন তিনি। পরে সংবাধমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সংসদ আলোচনার উপযুক্ত হোক। দেশের মানুষ যে জবাব চাইবেন, সেই জবাব দিতে সরকার প্রস্তুত। আমি সাংসদদের অনুরোধ করছি, কঠিন থেকে কঠিনতর প্রশ্ন করুন। কিন্তু শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে সরকারকে উত্তর দেওয়ারও সুযোগ দিন।’’
ছাতা হাতে সাংবাদিক বৈঠক মোদীর।
তবে মোদী কী বলেছেন তা নিয়ে ততটা নয়, যতটা ছাতা হাতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি নিয়ে উৎসাহী গেরুয়া শিবির। এই রাজ্যের সাংসদ প্রাক্তন মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর থেকে কখনও কি এমন দৃশ্য দেখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ছাতা ধরে আছেন! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুধু নেতা নন, উনি প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে এখন আদর্শ। নরেন্দ্র মোদীজির কর্মঠ মনোভাব, সঠিক নেতৃত্ব ভারতকে বিশ্বের দরবারে এক অন্যমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।’
বাংলার আর এক সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘আমরা এ রকম প্রধানমন্ত্রী পেয়ে সত্যিই খুব গর্বিত।’
বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের পোস্ট করা ছবির কোলাজ।
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক বিজয় রাহাতকর কংগ্রেসের সঙ্গে তুলনা টেনে এনেছেন। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘পণ্ডিত নেহরুর একেবারে এমন একটি ছবির অপেক্ষায় রয়েছি।’ সেই ধারা বজায় রেখে বাংলার সাংসদ সৌমিত্র কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দু’টি ছবি পোস্ট করেন। সেই ছবি দু’টিতে দেখা যাচ্ছে, সনিয়া ও মনমোহনের দেহরক্ষীরা ছাতা ধরে রয়েছেন। তবে সেই ছবি দু’টি বৃষ্টিদিনের নয়। আর এক বিজেপি নেতা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় শুধু সনিয়া, মনমোহন নয়, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢ়রা, বিমান বসু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়েরও এমন ছবি পোস্ট করেছেন যেখানে সংশ্লিষ্টদের মাথায় অন্য কেউ ছাতা ধরে রয়েছেন।
শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের একটা বড় অংশ এই ছবি নেটমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সকলেই গর্বের সঙ্গে যেন বলতে চেয়েছেন, ‘এমন প্রধানমন্ত্রী কোথাও গেলে পাবে নাকো তুমি...’
নেটমাধ্যমে এই ছবি ঘিরে নেটাগরিকদের অনেকে যেমন ‘ধন্য ধন্য’ করেছেন, তেমনই সমালোচনায় ভরিয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ মনে করিয়েছেন, মোদীর দামি পোশাকের কথা, কেউ তুলেছেন প্রধামন্ত্রীর ছবি তোলার সৌখিনতার প্রসঙ্গও। করোনা পরিস্থিতি সামলানো থেকে পেট্রোপণ্যের লাগামছাড়া দাম নিয়েও সমালোচনা করেছেন অনেকে।