রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার পরে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করেন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ছবিটি নিজেই টুইট করেছেন কৈলাস।
আগামী বছরের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে রাজ্যের বিজেপি বিধায়কের রহস্যমৃত্যুর আঁচ পৌঁছল রাজধানীতেও।
পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও অরবিন্দ মেননের নেতৃত্বে একটি দলীয় প্রতিনিধি দল আজ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়, স্বপন দাশগুপ্ত এবং রাজু বিস্তা। বিজেপির অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা যে ভেঙে পড়েছে, বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের ‘খুন’ই তার প্রমাণ। অতএব রাজ্যের বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হোক। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কাছে এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়েছে বিজেপি। পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করে বিজেপির প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘খুন করে তা আত্মহত্যা বলে চালানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের কোনও তদন্ত সংস্থার উপরে আমাদের ভরসা নেই। সেই কারণেই সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।’’
পাল্টা সক্রিয় হয়েছে তৃণমূলও। দলীয় সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতে, “রাজ্য বিজেপির কোনও স্বরই নেই। পুরো ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না-জেনে মিথ্যা চিত্রনাট্য তৈরি করা হচ্ছে।’’ রাষ্ট্রপতিকে ‘প্রকৃত ও বিস্তারিত তথ্য’ জানাতে আগামিকাল সকালে রাষ্ট্রপতি ভবন যেতে পারেন ডেরেকরা। বিজেপি প্রতিনিধি দল যে ভাবে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিয়ে রাজ্য সরকারকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে প্রশ্ন করা হয়, নির্বাচিত সরকারকে সরানো হবে কী ভাবে? দিলীপের জবাব, ‘‘সেটা রাষ্ট্রপতি ঠিক করবেন।’’ এর অর্থ কি তাঁরা ৩৫৬ ধারা চাইছেন? দিলীপ বলেন, ‘‘আমরা এখনও নৈতিক দিক দিয়ে ৩৫৬ চাই না। অগণতান্ত্রিক ভাবে সরকার ফেলতে চাই না।’’ আর বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মতে, রাজ্য নেতৃত্ব দাবি করলেও, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কোনও ভাবেই রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা ভাবা হচ্ছে না। উপরন্তু রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে সহানুভূতির ঝড় উঠবে। ভোটের বাক্সে যার ফায়দা পাবে তৃণমূল।
তবে সূত্রের খবর, রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারির দাবিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করতে চায় রাজ্য বিজেপি। এ নিয়ে পুজোর পরে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছিল তারা। বিধায়কের রহস্যমৃত্যু তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে। এখন থেকে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিরোধীদের হত্যা ও কেন রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রয়োজন তা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সরব হবেন বিজেপি নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যাতে হস্তক্ষেপ করে, সে জন্যও নিয়মিত কেন্দ্রের দ্বারস্থ হবে দল। বিজেপি সূত্রের মতে, রাজ্যপালের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বাংলায় টুইট করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তিনি বলেছেন, ‘‘পুলিশ অফিসারেরা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বা রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়ে কাজ করতে পারেন না। বিরোধী সাংসদ বা নেতাদের প্রতি অমর্যাদাকর আচরণ করলে তার মূল্য চোকাতে হবে।’’