আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে অমিত শাহের দল শুরু হয়েছে দান-পর্ব।
ইতিহাসের চাণক্য রাজ্য শাসনের পথ দেখিয়েছিলেন চারটি— সাম, দান, দণ্ড, ভেদ। এখনকার ‘চাণক্য’ অমিত শাহের দল শেষ তিনটি পথে সিএএ এবং এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে অসমে। প্রথমেই দণ্ডনীতি নিয়ে বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। তার পরে ভেদ-নীতি। আন্দোলন থেকে সরকারি কর্মীদের দূরে রাখতে চলছে তাঁদের নিয়মের নিগড়ে বাঁধা, শাস্তির হুমকি, এমনকি চাকরি খাওয়ার চেষ্টাও। সঙ্গে শুরু হয়েছে দান-পর্ব: সাহিত্য জগতের লোকজনকে দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
শুরু থেকেই ছাত্র সংগঠনগুলির সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছে অসমের শিল্পী সমাজ। সর্বানন্দ সোনোয়াল সরকার শিল্পীদের ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান ঘোষণা করেছে আগেই। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য স্বশাসিত পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বার আন্দোলন থেকে অসম সাহিত্য সভা কে সরিয়ে আনতে মুখ্যমন্ত্রী আজ তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ঘোষণা করেন, অনুদান হিসেবে অসম সাহিত্য সভাকে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। ওই বিপুল টাকা সংগঠনের ‘করপাস’ ফান্ডে জমা হবে। তা থেকে বছরে সুদ মিলবে ৮০ লক্ষ টাকা।
বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয় বড়ো সাহিত্য সভা-সহ ২৩টি জনগোষ্ঠীর সাহিত্য সভার কর্মকর্তাদের। তাদেরও মোটা অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সর্বানন্দ। বড়ো সাহিত্য সভা পাবে ৫ কোটি টাকা। তা থেকে বছরে সুদ মিলবে ৪০ লক্ষ টাকা। অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সাহিত্য সভা পাবে ৩ কোটি টাকা করে। এর বার্ষিক সুদও কম নয়। ২৪ লক্ষ টাকা। ভাষাগৌরব প্রকল্পে ১ হাজার লেখককে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অনুদান-প্রাপকদের তালিকা তৈরি করবে সংশ্লিষ্ট সাহিত্য সভাগুলিই।
আরও পড়ুন: সব বুলেটের লক্ষ্য সংবিধান: আজাদ
বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী এবং সাহিত্য সভার কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সিএএ নিয়ে বৈঠকে কোনও কথা হয়নি। তবে আন্দোলনে যুক্ত অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, লক্ষ-কোটির অনুদানেই অনেক কথা বলা হয়ে যায়! এটা স্রেফ টাকা ঢেলে আন্দোলন নেভানোর চেষ্টা। তবে তড়িঘড়ি কেউ মুখ খোলেননি আজ। সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৯-এর শুরুতেও অসমবাসী সর্বানন্দকে রক্ষক মনে করতেন। এখন সকলে তাঁকে ভণ্ড বলছেন।’’ গগৈয়ের মতে, ‘‘শুধু সর্বানন্দের নয়, গোটা বিজেপিরই এখন শনির দশা চলছে। একের পর এক রাজ্য হারাচ্ছে।’’