জয়োল্লাস এনপিপি নেত্রী তথা প্রয়াত পি এ সাংমার মেয়ে আগাথা সাংমার। কেন্দ্রে এনডিএ-র শরিক এই এনপিপি-কে সঙ্গে নিয়েই মেঘালয়ে সরকার গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। ছবি: পিটিআই।
জোর রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়ে গেল মেঘালয়ে। কংগ্রেসকেই আগে সরকার গড়ার সুযোগ দিতে হবে, শনিবার গভীর রাতে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে এমনই দাবি জানিয়ে এলেন মুকুল সাংমারা। আর যে কোনও মূল্যে কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে আঞ্চলিক দলগুলোকে এক জায়গায় আনার চেষ্টা শুরু করে দিল বিজেপি।
কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি এ বার মেঘালয়ে, বিধানসভা ত্রিশঙ্কু। কংগ্রেস এ বারও বৃহত্তম দল, কিন্তু নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির তরফে তৎপরতা তুঙ্গে। জোটসঙ্গীদের এবং অন্য আঞ্চলিক শক্তিদের একত্র করে সরকার গঠনের জন্য ময়দানে নেমে পড়েছেন বিজেপির ‘নর্থ-ইস্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট’ হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এনপিপি এবং ইউডিপি নেতৃত্বের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বৈঠক সেরে ফেলেছেন হিমন্ত। এইচএসপিডিপি এবং দুই নির্দলকেও সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
অন্য দিকে মরিয়া কংগ্রেসও। ত্রিপুরা-নাগাল্যান্ডে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া কংগ্রেস মেঘালয়ের ঘাঁটিটা বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। রাহুল গাঁধীর প্রতিনিধি হিসেবে শনিবারই শিলং পৌঁছেছেন আহমেদ পটেল এবং কমলনাথ। দলের প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তাঁদের। তার পর গভীর রাতে রাজ্যপাল গঙ্গা প্রসাদের সঙ্গে দেখা করে সরকার গড়ার দাবি পেশ করেছেন বিদায়ী সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা।
উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্যের নির্বাচনকে যতটা গুরুত্ব দিয়েছিল বিজেপি, ততটা আগে কখনও দেখা যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেস, বাম এবং অন্যান্য বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলির তরফ থেকে প্রতিরোধের চেষ্টাও ছিল তীব্র। তার জেরে ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডের নির্বাচনী লড়াই এ বার অত্যন্ত সরগরম ছিল। ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরে ত্রিপুরা এবং নাগাল্যান্ডে বিজেপি তথা এনডিএ-র জয়োল্লাস রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক তৎপরতা ক্রমশ কমে আসছে। মেঘালয়ে ছবিটা ঠিক উল্টো। বিধানসভা ত্রিশঙ্কু হওয়ায় সরকার গঠনের জন্য জোটসঙ্গী জোটানো আবশ্যিক হয়ে পড়েছে সে রাজ্যে। কংগ্রেস-বিজেপি, দু’পক্ষই তৎপর সে লড়াইতে। আর সেই রাজনৈতিক সক্রিয়তায় ফল প্রকাশের পরে আগের চেয়েও বেশি সরগরম পাহাড়ি রাজ্য।
মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা এবং তাঁর স্ত্রী ডিকাঞ্চি ডি শিরা, দু’জনেই জিতেছেন নিজের নিজের কেন্দ্রে। কিন্তু কংগ্রেস আটকে গিয়েছে ম্যাজিক ফিগার থেকে অনেক দূরেই। ছবি: পিটিআই।
মেঘালয়ে এনপিপি ১৯টি আসন পেয়েছে। বৃহত্তম দল কংগ্রেসের চেয়ে মাত্র ২টি আসন কম। বিজেপি পেয়েছে ২টি। অর্থাৎ দুই দল মিলে কংগ্রেসের সমান। মেঘালয়ের নির্বাচনে এনপিপি এবং বিজেপি আলাদা আলাদা লড়লেও, কেন্দ্রে কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র শরিক কনরাড সাংমার দল। ফলে ভোটের পরে দু’দল যে হাত মেলাবে, তা জানাই ছিল রাজনৈতিক শিবিরের। ৬টি আসনে জয়ী হওয়া ইউডিপি আবার এনডিএ শরিক নয়। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন দলকে নিয়ে বিজেপি যে নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স গড়েছে, ইউডিপি সেই জোটের শরিক। ফলে ইউডিপি-র সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারেও বিজেপি আত্মবিশ্বাসী।
আরও পড়ুন: মানিকের ইস্তফা, আপাতত কাজ চালাতে বললেন তথাগত
এনপিপি, ইউডিপি-কে বিজেপি সঙ্গে পেলেও সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৩১টি আসনে পৌঁছনো যাবে না। আরও ৪টি আসনের দরকার পড়বে। সে কথা মাথায় রেখে ইউডিপি-র মেঘালয় ভিত্তিক জোটসঙ্গী এইচএসপিডিপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। ওই দলটি ২টি আসন পেয়েছে। আরও ২ নির্দল বিধায়কের সঙ্গেও বিজেপির কথা চলছে। কথা চলছে পিডিএফ নামে একটি দলের সঙ্গেও, যারা ৪টি আসন পেয়েছে। সবক’টি আলোচনা ফলপ্রসূ হলে, বিজেপির জোট ৩৫-এ পৌঁছে যাবে। আর যাঁদের সঙ্গে কথা চলছে, তাঁরা সকলে যদি বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে না চান, তা হলেও ৩১ জন বিধায়কের সমর্থন পাওয়া খুব কঠিন হবে না বলে বিজেপির দাবি।