প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত কাল বেঙ্গালুরুতে কর্নাটকের ভোক্কালিগা সমাজের অন্যতম নেতা নাদপ্রভু কেম্পেগৌড়ার ১০৮ ফুট উঁচু মূর্তির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন হয় ওই নেতার নামে থিম পার্কের। আগামী বছর কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে কেম্পেগৌড়ার নামে বিজেপির ওই সক্রিয়তা ভোক্কালিগা সমাজের সমর্থন কুড়োনোর লক্ষ্যেই বলে মনে করছেন রাজনীতির অনেকে।
কর্নাটকের অন্যতম দুই প্রধান জনগোষ্ঠী হল লিঙ্গায়েত ও ভোক্কালিগা। এর মধ্যে কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা লিঙ্গায়েত সমাজের প্রতিনিধি হওয়ায় এত দিন ওই সমাজের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন পেয়ে এসেছে বিজেপি। কিন্তু বছর খানেক আগে রাজ্যে ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ার আঁচ পেয়ে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী হন বাসবরাজ বোম্মাই। ঘটনাচক্রে তিনিও লিঙ্গায়েত সমাজের হলেও, নিজের সমাজের উপরে ইয়েদুরাপ্পার যতটা প্রভাব ছিল বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর তা নেই। তা ছাড়া সরকারের মেয়াদের মাঝে ইয়েদুরাপ্পাকে সরিয়ে দেওয়া ভাল ভাবে নেয়নি ওই রাজ্যের লিঙ্গায়েত সমাজের বড় অংশ। তাই আগামী ভোটে লিঙ্গায়েত সমাজের বিশ্বস্ততা বিজেপির প্রতি কতটা থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ বার ভোক্কালিগাদের কাছে টেনে ক্ষত মেরামতিতে তৎপর নরেন্দ্র মোদী।
অতীতেও এক দশক আগে ভোক্কালিগাদের কাছে টানতে তৎপর হয়েছিলেন তৎকালীন বিজেপি নেতৃত্ব। ২০১১ সালে ইয়েদুরাপ্পাকে সরিয়ে ভোক্কালিগা নেতা সদানন্দ গৌড়াকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু ইয়েদুরাপ্পা ক্ষমতায় না থাকলেও সে সময়ে সরকারের রাশ লিঙ্গায়েত নেতাদের হাতে থাকায় ভোক্কালিগাদের সমর্থন কুড়োনোর প্রশ্নে ব্যর্থ হন মাত্র এক বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্বের দায়িত্বে থাকা সদানন্দ গৌড়া। ২০১৪ সালে প্রথম মোদী সরকার ক্ষমতায় এলে সদানন্দকে রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দ্বিতীয় মোদী সরকারের আমলে প্রথম দু’বছর কেন্দ্রীয় রসায়ন ও সার মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু ২০২১ সালে গৌড়াকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে রাজ্যে দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব দেয় দল।
কর্নাটক রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির উত্থানের পর থেকেই লিঙ্গায়েত সমাজ তাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল। দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে রেষারেষির কারণে ভোক্কালিগারা সমর্থনের প্রশ্নে বেছে নেয় এইচ ডি দেবগোড়ার দল জেডিএস-কে। বর্তমানে রাজ্যের ২৪৮টি আসনের মধ্যে দশ শতাংশ আসনে ভোক্কালিগাদের ভাল রকম প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে পুরাতন মহীশূর এলাকায় একাধিক আসনে স্থানীয় ভোক্কালিগা সমাজ নির্বাচনে জয় পরাজয়ের প্রশ্নে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে থাকে। কর্নাটকের রাজনীতিতে ভোক্কালিগা প্রভাবিত পুরনো মহীশূর এলাকায় তুলনায় বিজেপির প্রভাব নেই বললেই চলে। তাই দলের লক্ষ্যই হল আগামী দিনে ভোক্কালিগাদের কাছে টেনে ওই আসনগুলিতে ভাল ফল করে জেডিএসকে বিধানসভা ভোটে ধাক্কা দেওয়া। সেই লক্ষ্যেই ভোক্কালিগাদের প্রধান ‘আইকন’ কেম্পেগৌড়ার মূর্তি উন্মোচন ও থিম পার্কের উদ্বোধনের মাধ্যমে বার্তা দেওয়ার সঙ্গেই, কৃষি নির্ভর ভোক্কালিগা সমাজের উন্নয়নে একাধিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।