প্রতীকী ছবি।
স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে গোটা দেশকে জাতীয়তাবাদে উদ্দীপ্ত করতে যাত্রা শুরু করল মোদী সরকার। আগামী ১২ মার্চ গুজরাতের সাবরমতী আশ্রম থেকে ২১ দিনের প্রতীকী ডান্ডি অভিযানের সবুজ পতাকা ওড়াবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে ঢাকে কাঠি পড়বে স্বাধীনতার ৭৫ বছরের এক বছর ব্যাপী অনুষ্ঠানের।
স্বাধীনতা সংগ্রামে আরএসএসের ভূমিকা নিয়ে যতই বিতর্ক থাক, আজাদির ৭৫ বছর উপলক্ষে ‘ভারত কা অমৃত মহোৎসব’-এর আয়োজন করে দেশবাসীকে সংযুক্ত করার কাজে পিছিয়ে থাকবেন না প্রধানমন্ত্রী মোদী। স্বাধীনতা সংগ্রামের সমস্ত মাইলফলক ঘটনাগুলিকে পুনর্নির্মাণ করবেন তিনি, এমনটাই জানা গিয়েছে রাজনৈতিক সূত্রে। সূত্রের দাবি, তাতে বিজেপির জাতীয়তাবাদের পালে জোরালো বাতাস লাগবে বলে আশা করছেন দলের নেতৃত্ব। ১৯৩০ সালের ১২ মার্চ ডান্ডি পদযাত্রা বা লবণ সত্যাগ্রহ শুরু করেছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, ব্রিটিশদের একচেটিয়া কর নীতির বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সেই আন্দোলনের স্মৃতিকে এ বার ফিরিয়ে আনছে বিজেপি।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদ্যাপনের জন্য যে জাতীয় কমিটি তৈরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ভিডিয়ো মাধ্যমে তার প্রথম বৈঠক হল আজ। শুধু ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিই নয়, ২০৪৭ সালে ১০০ বছরের পরিকল্পনাও এখন থেকেই শুরু করে দেওয়ার ডাক ইতিমধ্যেই দিতে দেখা গিয়েছে মোদীকে। আজ তিনি বলেছেন, “দেশের যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর হবে তখন ভারতের স্থান কোথায় থাকবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময় এসে গিয়েছে। এই ৭৫ বছর পূর্তির উৎসবই আমাদের প্রেরণা দেবে শতবর্ষকে মজবুত ভাবে পালন করার জন্য।” তাঁর সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং সংকল্পগুলি যে সেই লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করে দিয়ে মোদী বলেন, “২০৪৭ সালে আমরা দেশকে একটি জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। আর সে কারণেই নতুন নতুন ভাবনা, নীতি এবং সংস্কারের পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আত্মনির্ভর ভারত সেই ভাবনারই ফসল। স্বাধীনতার জন্য যাঁরা লড়াই করেছেন তাঁদের স্বপ্নকে সফল করার জন্যই এই প্রয়াস।”
দেশের প্রতিটি প্রান্তে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, যাঁদের পরিচিতি ইতিহাসে সে ভাবে নেই, তাঁদের খুঁজে বার করে সম্মান জানাবে মোদী সরকার। সেই সব কাহিনিকে সামনে নিয়ে এসে স্বাধীনতার লড়াইয়ের একটি নতুন অধ্যায় বা চিত্রনাট্য বা ইতিহাস তৈরি করা হবে। যার নেতৃত্বে থাকবেন স্বয়ং মোদী।
স্বাধীনতার ৭৫তম বছর উদ্যাপনের জন্য যে ২৫৯ জনের উচ্চস্তরীয় কমিটি গড়া হয়েছে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল, মনমোহন সিংহ এবং এইচ ডি দেবগৌড়ার মতো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরা, সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তার সদস্য। স্বাভাবিক ভাবে তাতে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (যদিও তিনি আজকের বৈঠকে ছিলেন না)। কমিটিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রধান, প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, শিল্পপতি রতন টাটা, আজিম প্রেমজি-রা রয়েছেন। রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও। যোগগুরু রামদেব, আধ্যাত্মিক গুরু জাগ্গি বাসুদেব থেকে চলচ্চিত্র জগতের অমিতাভ বচ্চন, এ আর রহমান, রজনীকান্ত, অক্ষয় কুমার, হেমা মালিনী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, প্রসূন জোশীরা রয়েছেন।
‘ভারত কা অমৃত মহোৎসব’-এর একটি জুতসই লোগো পেতে মাইগভ পোর্টালে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে মোদী সরকার। পুরস্কারমূল্য ১ লক্ষ, ৫০ হাজার ও ২৫ হাজার টাকা। লোগো জমা নেওয়া শেষ হল আজ। জমা পড়েছে মোট ২৭২৭টি লোগো।